১২৭ বছর বয়সেও মসজিদে হেঁটে গিয়ে নামাজ পড়েন কুমিল্লার মোখলেছুর রহমান!

জাতীয় ভোটার আইডি কার্ডের হিসাব অনুযায়ী মোখলেছুর রহমানের বয়স ১০৫ বছর, তবে তিনি দাবি করেন, তার বয়স ১২৭ বছর। ১৩১৮ বাংলা সালে তার বয়স ছিল ১৫ বছর।

মোখলেছুর রহমান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নে মনপাল গ্রামের বাসিন্দা। 

এই বয়সেও আজানের সুর কানে এলেই নিজে পায়ে হেঁটে মসজিদে যান এবং নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তিনি।

গ্রামে তার সমসাময়িক কেউ বেঁচে নেই। তার বন্ধু-সহপাঠীরা মারা গেছেন ৫৫-৬৫ বছর আগে। দিনমজুর ও রিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা মোখলেছুর রহমানের লেখাপড়া নেই। 

তবে অবাক করার বিষয়— বছরের পর বছর ধরে চশমা ছাড়াই খালি চোখে এই বৃদ্ধ এখনো বাড়ির পাশে দোকানে গিয়ে চায়ের কাপে পাউরুটি চুবিয়ে মুখে নেন। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যোগ দেন বৃদ্ধ বাবা মোখলেছুর রহমান। 

তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাঁচার মতো ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সেখানে তিনি একা থাকেন। পাশের বেড়াগুলো ভাঙা। পৌষের হিমেল বাতাসের সেখানে অবাধ আসা-যাওয়া। তার স্মৃতিশক্তি প্রখর। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নানা ঘটনাপ্রবাহ তার মুখস্থ।

তিন শতকের ইতিহাস ধারণ করেছে তার শরীরের ভাঁজপড়া মোটা চামড়া। বাল্যশিক্ষা বইয়ে দেখেছেন রানির ছবি। মাথায় মুকুট। ব্রিটিশের রানি হয়েছে ওটা তো সেদিনের কথা। তিনি সম্ভবত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের (১৯৫২-২০২২) কথা বলেছেন। 

মোখলেছুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কাজ করেছি-যুবক বয়সে যেসব খাবার খেয়েছি, তার সবই ছিল ভেজালমুক্ত। স্বাদ ছিল। সব খাবার ছিল একদম নির্ভেজাল। আর এখন সবই ভেজাল, মানুষের মধ্যে ভেজাল, খাবারে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, আমাদের চারপাশটাই যেন ভেজালে পরিণত হয়েছে। এ কারণে মানুষের রোগবালাইও কমছে না।

তিনি আরও বলেন, দেশে একসময় খুব অভাব ছিল। গ্রামের রাস্তাঘাট ছিল না। টিভি রেডিও ছিল না। বর্ষায় গ্রাম থেকে নৌকা ছাড়া বের হওয়া যেত না। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে সন্ধ্যায় পুঁথি পাঠ ও জারি গানের আসর বসত। সারাদিন কাজ করে এক আনা পেতেন। তখন চাল সোয়া সের ছিল তিন আনা। কর্ম করে নিজে খেয়েছি। ছেলে-মেয়েকে খাইয়েছি। এখন খেতে পারি না। এক সময় আধা কেজি থেকে পৌনে এক কেজি চালের ভাত খেয়েছি। 

আমার থেকে বেশি বয়সের মানুষ আশপাশের ২০ গ্রামেও নেই। আমার বাবা আক্রম উদ্দিন ৬৫ বছর ও মা জোবেদা খাতুন ১১০ বছর বয়সে মারা যান। কয়েক বছর আগে স্ত্রী রহিমা খাতুন ৭৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিন ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। যারা আছেন তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তাই তার প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও কাপড় মেলে না। তার একটি বয়স্কভাতার কার্ড আছে। তিনি তিন মাসে ১৫০০ টাকা পান। আরও কিছু সহযেগিতা পেলে তার সুবিধা হবে।

মোখলেছুর রহমানের ছেলে মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে ফয়সাল আহমেদ রাসেল বলেন, আমার দাদার বয়সি কোনো মানুষ আর মনপাল এলাকায় নেই। এই বয়সেও আমার দাদা খালি চোখে ও পায়ে হেঁটে মসজিদে গিয়ে নিয়মিত নামাজ পড়ছেন, এটি একটি দৃষ্টান্ত।

মোল্লাবাড়ির ৮০ বছরের ইমান আলী মোল্লা বলেন, মোখলেছ ভাই আমাদের অনেক বড়। তাকে আমরা ছোটবেলায়ও এমন দেখেছি। তিনি শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। প্রচুর খেতে পারতেন। তার মতো বেশি বয়সি মানুষ ১০ গ্রামেও নেই।

গ্রামের বাসিন্দা উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মাসুদুল হক বলেন, মোখলেছুর রহমান ভালো মনের মানুষ। আর্থিক সহযোগিতা পেলে তিনি আরও ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন