কুমিল্লায় ওসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন পরিবহন আটকের পর চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদে ওসির বিরুদ্ধে পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা।

গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরের হাটিরপাড় গ্রামের ছিখুটিয়া রাস্তার মাথা নামক স্থানে মনোহরগঞ্জ-লাকসাম সড়কে অন্তত ২০টি ট্রাক্টর রেখে অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করা হয়। এতে ট্রাক, ট্রাক্টর, পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনের মালিক, চালক ও ইট, বালু, রড ব্যবসায়ীরাও অংশ নেয়। অবরোধকালে সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়ে গাড়ির যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা গিয়ে দুই দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে সকাল ১১টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

বিক্ষোভকারী শ্রমিক ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রায় পাঁচ মাস আগে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন মো. আনোয়ার হোসেন। এরপর বিভিন্ন পরিবহন থেকে ব্যাপক চাঁদা আদায় ও আটক বাণিজ্য শুরু করেন তিনি। তিনি সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া ট্রাক, ট্রাক্টর, পিকআপ, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ওপর। আগে এসব পরিবহন থেকে নির্দিষ্ট হারে মাসিক চাঁদা আদায় করা হতো। এক মাসের জন্য দেওয়া হতো একটি বিশেষ টোকেন। সেই টোকেন না নিলে পুলিশ হয়রানি করত পরিবহন চালক ও মালিকদের। বর্তমান ওসি আনোয়ার মাসিক চাঁদা উত্তোলনের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে এসব পরিবহন আটক বাণিজ্য করছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে এসব গাড়ি আটক করে থানায় এনে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন তিনি।

বিক্ষোভকারী শহিদুল ইসলাম শহীদ বলেন, ‘আমি ট্রাক্টরচালক। আগে আমাদের প্রতিটি ট্রাক্টর থেকে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে (চাঁদা) নেওয়া হতো। এর বিনিময়ে আমাদের একটি টোকেন দেওয়া হতো। টোকেনটি দিয়ে আমরা গাড়ি চালিয়ে পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতাম। কিন্তু বর্তমান ওসি মাসিক নেওয়ার পাশাপাশি আটক বাণিজ্যের মাধ্যমে আমাদের ওপর অত্যাচার করছেন। তিনি আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে ট্রাক্টর আটক করবেন। আর সেগুলোর প্রতিটি ২০ হাজার টাকা করে দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হবে। গতকালও আমাদের দুটি ট্রাক্টর আটক করে একটি থেকে সাত হাজার, অন্যটি থেকে ৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন তিনি।’

শ্রমিক রবিউল হোসেন বলেন, ‘মনোহরগঞ্জ থানার ওসি আমাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করছেন। তাঁর কথামতো টাকা না দিলে আমাদের হাজতে ঢোকাবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে সড়ক অবরোধ করেছি।’ আবদুল হান্নান নামের একজন বলেন, ‘আমরা ট্রাক্টর দিয়ে বালু, ইট, রড ইত্যাদি টানি। আর ইরি-বোরো মৌসুমে হালচাষ করি। তবে ওসির জন্য কয়েক মাস ধরে রাস্তায় বের হতেও ভয় লাগে। তিনি টাকার জন্য আমাদের হয়রানি করছেন।’

নাম না প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, আগে সিএনজি স্ট্যান্ডসহ সব স্থান থেকে মান্থলির (মাসিক) নামে ওসির নিযুক্ত একজন ‘ক্যাশিয়ার’ (পুলিশ সদস্য) তাঁদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। কিন্তু বর্তমান ওসি নিজেই টাকা তুলছেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ট্রাক্টর হালচাষের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে ইট, বালু, রড ও মাটি পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অবৈধ। তবে ওসির আটক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও শ্রমিকদের অত্যাচার আরো বড় অপরাধ।

অভিযুক্ত মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আপনারা ট্রাক্টরচালকদের বলেন তারা যেন ট্রাক্টর না চালায়। তারা যেন অন্য পেশায় চলে যায়। তাহলেই তো ওসি সাহেবকে আর টাকা দিতে হবে না।’ পরে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা কথা। এসব ট্রাক্টরের কারণে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে, সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি তাদের বাধা দিচ্ছি বলে তারা এমন (বিক্ষোভ) করছে।’ এ সময় এই প্রতিবেদককে ওসির পক্ষে প্রতিবেদন করার পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

আরো পড়ুন