কুমিল্লার তরুণ অভিনেতা আখন্দ জাহিদ
ডেস্ক রিপোর্টঃ পলাশী দিবস ২৩ জুন। আর এই ‘পলাশী’ বাঙালি কারও কাছেই অচেনা কোন স্থান এর নাম নয়। এই পলাশীর কথা কানে আসা মাত্রই যেন সবার শরীর হিম হয়ে হৃদয়ের মাঝে শুরু হতে থাকে বোবা কান্নার খরস্রোত। যে খরস্রোতের প্রত্যেকটি ঢেউয়ের আঘাতে পাজর ভাঙা ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে স্মরণ করিয়ে দেয় বিশ্বাসঘাতকতার সেই নির্মম ইতিহাস।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন দিনটি আমাদের ভূ-খণ্ডের ইতিহাসের জন্য ঘৃণিত অধ্যায়। এই দিনটিতে চিরদিনের মতো বিশ্বাসঘাতকতার কাছে পরাজিত হয় বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নায়ক নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং তাঁর পরাজয়ের সাথেই অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার স্বাধীন সূর্য।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেকে একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ডের একজন মুক্তিকামি মানুষের সংগ্রামের নাম। যিনি বাংলাকে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন হতে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও বিশ্বাসঘাতকতার কাছে পরাজিত হন। পলাশীর যুদ্ধে তাঁর পরাজয় এবং মৃত্যুর পরই ভারতবর্ষে প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের সুচনা হয়।
২৬১ বছর পূর্বে বাংলার এই বীর সন্তান নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার শাসনের সমাপ্তি হলেও প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এখনও স্থান দখল করে আছেন এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত ইতিহাসের শ্রেষ্ট সন্তান এর স্থান থাকবে সবার মনের মনিকোঠায়।
বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বেঁচে রবেন ইতিহাসের পাতায়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে মানুষ খুঁজে পাবেন পাঠ্যবই, তাঁর জীবনী নিয়ে প্রকাশিত বই এবং নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্রের মাঝে।
আমাদের এই উপমহাদেশে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিয়ে অনেক যাত্রা,নাটক,চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। বর্তমানে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিয়ে ঢাকার মঞ্চে চারুনীড়ম থিয়েটার মঞ্চস্থ করছে নাটক শেষ নবাব। শেষ নবাব নাটকটি রচনা করেছেন প্রথিতযশা নাট্যকার সাঈদ আহমদ এবং নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন গাজী রাকায়েত। চলচ্চিত্র, নাটক ও যাত্রার কারণে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশীকে নিয়ে সৃষ্ট আবেগি ভাবনাটাকে শেষ নবাব নাটকে দৃঢ় বাস্তবতায় রুপ দিয়েছেন নাট্যকার সাঈদ আহমদ । শেষ নবাব নাটকটি চারুনীড়ম থিয়টারের সর্বশেষ নতুন প্রযোজনা। ইতিমধ্যে নাটকটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
শেষ নবাব নাটকটিতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা চরিত্রে অভিনয় করছেন আখন্দ জাহিদ।
তরুণ অভিনেতা আখন্দ জাহিদ। বাড়ি কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জে। একাধারে কাজ করে চলেছেন মঞ্চ ও টিভি নাটকে। শিল্পী হিসেবে নিজেকে ক্রমে দক্ষ করতে চান এই অভিনেতা।
আলাপকালে আখন্দ জাহিদ বলেন, অভিনেতা হতে চাই না শিল্পী হতে চায়। অভিনয় শিল্পে নিজেকে যুক্ত রাখতে চাই আজীবন।
অভিনয়ে আখন্দ জাহিদের হাতেখড়ি গাজী রাকায়েতের হাত ধরে। চারুনীড়ম-এর স্কুলিং কর্মশালায় তিন মাস ক্লাস করার পর সরাসরি যুক্ত হন মঞ্চনাটকে। শুরুটা হয় ২০১৪ সাল থেকে। ছোট্ট একটা অংশে সংলাপহীন একটি চরিত্র রূপায়ণ করেছিলেন তিনি। নাটকের শিরোনাম ‘অবাক দেশ এবং বুড়ো’। এরপরে সাঈদ আহমেদের নির্দেশনায় মঞ্চনাটক ‘শেষ নবাব’-এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রূপায়ণ করেন তিনি।
আখন্দ জাহিদ বলেন, ‘চারুনীড়মের বহুল আলোচিত নাটক ‘শরতের মেঘ’ দীর্ঘ বিরতি শেষে মঞ্চে আসছে। এই নাটকে জমিদার চরিত্রটি এবার আমি রূপায়ণ করব। নিজেকে প্রস্তুত করছি। রিহার্সেল চলছে।’
মঞ্চ ছাড়াও জিএম সৈকতের নির্দেশনায় টেলিভিশন নাটক ক্রাইম ফিকশন ‘ডিবি’তে অভিনয় করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ থ্রিডি, ভিএফএক্স ও ভিজ্যুয়াল গ্রাফিক্স নির্ভর ৭ পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘ডালিম কুমার’-এ দেড়শ’ বছর বয়সী বৃদ্ধের ভূমিকায় অভিনয় করে আলোচনায় আসেন আখন্দ জাহিদ।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন -আমাদের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বপ্রথম বীর শহীদ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। তাঁর এই ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করা সত্যিই সৌভাগ্যর বিষয় । আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার গুরু গাজী রাকাতের স্যারকে যিনি আমাকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা চরিত্রটি মঞ্চে আরও ভালো করার জন্য আমি নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা আমাদের এই শেষ নবাব নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশীর ইতিহাসকে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।