লাকসামের ভাষা সৈনিক আবদুল জলিল আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউপির চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা ভাষা সৈনিক, বরেণ্য সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও সাপ্তাহিক লাকসামের প্রকাশক-সম্পাদক আবদুল জলিল (৯০) লাকসাম মমতাময়ী হসপিটালে আজ ২৪ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪০মিনিটের সময় সকলের মায়া ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহে……রাজেউন)। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে সহ অসংখ্য স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে যান।
আজ বাদ মাগরিব মরহুম আবদুল জলিলের ১ম জানাযা লাকসাম বাজার জামে মসজিদে ও মহুমের নিজ গ্রাম উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২য় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরেস্থানে দাফন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৩ জানুয়ারি রোববার ভাষা সৈনিক আব্দুল জলিল তার নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক তাকে লাকসাম মমতাময়ী হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসরা তাকে কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার হসপিটালে স্থানান্তর করেন। অবস্থার অবনতি দেখে পরদিন সোমবার পুনরায় তাকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার দিনদিন অবনতি দেখে ডাক্তারের পরামর্শে স্থানীয় মমতাময়ী হসপিটালে ভর্তি রাখে। হঠাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলে না ফেরার দেশে।
উল্লেখ্য, ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নের চন্দনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাষা সৈনিক আবদুল জলিল। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার তাগিদে যোগদান করেছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তিনি দক্ষিণ কুমিল্লা প্রাচীন সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক লাকসাম’ এর প্রকাশক ও সম্পাদক।
বিভিন্ন সময় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ট্র্যাব), বাসস, বাংলাদেশ বেতার কুমিল্লা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ভাষা সৈনিক আবদুল জলিলকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। তার লেখা নাটক ‘খুনে লাল বাংলা’ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বৃহত্তর লাকসাম ও কুমিল্লা সংক্ষিপ্ত অধ্যায়সহ জনপদ কথামালা, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সাংবাদিকতার উদ্ভব ও বিকাশের ইতিহাস, ওগো বঙ্গবন্ধু, সাগর তীরে কেওড়াবনে, পীর মুর্শিদের বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সত্তরের দশকে তিনি উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘর ও সুজন মজলিশের আঞ্চলিক সংগঠক হিসেব ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘লাকসাম লেখক সংঘ’র মাধ্যমে তিনি সৃজনশীল লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক তৈরির প্রচেষ্টায় সফল হয়েছেন।