কুমিল্লায় জমজমাট ঈদ বাজার, খাদি শিল্পে বিপর্যয়
ডেস্ক রিপোর্টঃ ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ…বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটির কথা মনে পড়ছে। কারণ, মুসলমানদের সবচে’ বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর আসন্ন। ঈদ মানেই আনন্দ, সুখ দুঃখের ভেদাভেদ ভুলে এক প্রাণে মিলিত হওয়া। মুখরোচক ও বিভিন্ন বাহারি খাবারের পাশাপাশি ঈদের আনন্দকে পরিপূর্ণ করে তুলতে নতুন জামা-কাপড়ও চাই।
আর, তাই মানুষের ঢল নেমেছে কুমিল্লার বিভিন্ন অভিজাত বস্ত্র বিপণিবিতান ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে। আজ সারাদিন সরেজমিনে ঘুরে এই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। অভিজাত ব্রান্ডের মধ্যে আড়ং, সেইলর, স্পার্কগিয়ার, জেন্টলপার্ক, টপ টেন মার্ট, ইজিসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্রান্ডে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি নগরীর সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, চৌরঙ্গী শপিং সেন্টার, নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকানগুলোতেও ছিল চোখে পড়ার মতো ভীড়।
শুধু নামীদামী ব্রাণ্ড কিংবা বিভিন্ন মার্কেটই নয়, পিছিয়ে নেই ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোও, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা সাধ্যমত কেনাকাটা করছেন সেখান থেকে।
তবে, দুর্দশা বিরাজ করছে খাদিশিল্প ও খাদি কাপড়ের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। বরাবরের মতই দ্বন্দ্বটা ইন্ডিয়ান কাপড়ের সাথে।
এ সময় বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের মধ্যে মামুন নামের একজনের হাতে ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি দেখা যায়। কেন দেশীয় কাপড় বাদ দিয়ে কিনছেন ইন্ডিয়ান কাপড়। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাপড় সম্পর্কে আমি বা সাধারণ জনগণ তেমন বুঝে না। যেটা ভাল লাগছে আমি ওইটাই কিনেছি’।
জানা যায়, সীমান্তঘেঁষা জেলা হওয়ায় কুমিল্লার অধিকাংশ মার্কেটগুলোতেই সহজে এবং অবাধে প্রবেশ করছে ইন্ডিয়ার থ্রী-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য পোষাকসমূহ। চাকচিক্য এবং জাঁকালো কাজের কারণে অধিকাংশ ক্রেতাই দেশীয় কাপড় বাদ দিয়ে ঝুঁকছেন ইন্ডিয়ান কাপড়ের দিকে। ডাম্পিং (কম মূল্যে বিদেশি পণ্য প্রবেশের মাধ্যমে দেশীয় বাজার দখল) এর ফলে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না খাদি বা খদ্দর।
কথা হয়, ‘খাদি আড়ং’ এর সত্ত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন মজুমদারের সাথে, ‘এ সময় বিক্রয় আশানুরূপ হচ্ছে না জানিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘প্রচারের অভাবে ও ইন্ডিয়ান কাপড়ের আধিক্যের ফলে টিকতে পারছে না দেশীয় খাদি কাপড়। এছাড়াও খাদি কাপড়ের দামের চেয়ে কমদামে ইন্ডিয়ান কাপড়ের সহজলভ্যতা এই শিল্প ও ঐতিহ্যকে আরও ধ্বসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি খাদির দুর্ভোগ এবং তা দূরীকরণে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং আশংকা করে বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে এক সময় খাদি শিল্প হয়তো পুরোপুরিভাবে হারিয়ে যাবে।
তবে, ঈদ উপলক্ষ্যে মার্কেটগুলোতে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। অনেকেই ঘুরে-ঘুরে জামা-কাপড়ের পাশাপাশি কিনছেন শো-পিস, অলংকারও। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী, সু-নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে, নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে চান সবাই, এমনটাই প্রত্যাশা কুমিল্লাবাসীর।