ক্রেতা কম কুমিল্লার হাটগুলোতে
এখনও জমে ওঠেনি কুমিল্লার হাট-বাজারে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। তবে বাজারে দেশীয় পশুর বিপুল পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। হাটে এসে ঘোরাঘুরি করছেন ক্রেতারা। বাজেটের সঙ্গে পছন্দের পশু মেলাতে পারছেন না। আগ্রহ বেড়েছে ছোট পশুতে। শেষ সময়ে দাম কমার অপেক্ষায় আছেন। তবে বিক্রেতারা কাঙ্ক্ষিত দামে পৌঁছা পর্যন্ত লোকসান দিয়ে পশু ছাড়ছেন না। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, কুমিল্লায় অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে পশু কেনা-বেচায় বেশ সাড়া মিলছে।
কুমিল্লার বিখ্যাত পশুর হাট চৌয়ারা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, নানা দাম ও রঙের পশু বাজারে উঠেছে। তার মধ্যে দেশীয় পশুর সরবরাহ অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে বেশ ভালো। কিন্তু বিক্রেতারা ক্রেতা সংকটে দিশেহারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটে অবস্থানের পর বিক্রি না হওয়ায় পশু নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
এছাড়া জেলার চান্দিনা, সদর ও বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ব্যবসায়ী এবং খামারিদের পাশা-পাশি অন্যান্য জেলা থেকে বেপারিরা পশু নিয়ে আসছেন। তবে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মিলছে না এখনও। হতাশায় ভুগছেন পশু খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পশুর হাট-বাজারগুলোতে অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য ইজারাদার মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিপুল লোকসমাগমের কারণে এ ঘোষণা কেউ কর্ণপাত করছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কোরবানি পশু কেনার জন্য অনলাইন অ্যাপস চালু করেছে। এতে করোনা সংক্রমণ রোধে স্বল্প পরিসরে হাটে যাওয়ার জন্য এবং অনলাইনের মাধ্যমে গরু কেনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে শহরের কিছু মানুষ অনলাইনে গরু কিনলেও গ্রামের মানুষের ভরসা হাট।
প্রায় ১৬ মণ ওজনের দুটি ষাঁড় নিয়ে বিপাকে আছেন দিশাবন্দ এলাকার শাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, প্রতিবারই দুটি করে গরু লালন-পালন করেন। গত বছর ঈদের এক সপ্তাহ আগে বাড়ি থেকেই সেগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার করোনার কারণে বাড়িতে ক্রেতা তেমন মেলেনি। তিনি গরু দুটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
চৌয়ার গ্রামের গরু বিক্রেতা আনু মিয়া জানান, করোনা সংকটে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গরু পালন কঠিন হয়ে গেছে। ক্রেতা নেই বলে গরু বিক্রি করতে পারছেন না। দিন যত এগুচ্ছে চিন্তার ভাঁজ বেড়ে যাচ্ছে।
ক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার দাম কম। আমরা গরু দেখছি। আজ পছন্দ হলে কিনবো, না হলে আরও একটা বাজার দেখার পর কিনবো। এখনও তো কোরবানির এক সপ্তাহ বাকি আছে।’
দেবীদ্বার সুলতানপুর ইউনিয়ন এলাকার গরু খামারি সফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান জানান, এবার ঈদে তার খামারে পালন করা ২৫০টি গরু বিক্রি করবেন তিনি। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও তারা দেশি ও বিদেশি জাতের গরু স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করেছেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস খামারের বড় গরুর বেচা-কেনায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
চৌয়ারা কোরবানির হাটের ইজারাদার দুলাল মাস্টার জানান, হাটে আশপাশের এলাকার প্রচুর গরু উঠেছে। স্থানীয় গরুই বেশি, কিন্তু বিক্রি কম। ফলে এবার লাভ না হয়ে ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। এ বাজারে প্রতিদিন হাট বসলেও আগামী মঙ্গলবার হাটে কাঙ্ক্ষিত বেচা-বিক্রি হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার্থে আমাদের কমিটির লোকজন প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বেলা ২টার পর বিপুল ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পিন্টু বেপারি জানান, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে অনলাইন কেনা-বেচায় মানুষের মাঝে সাড়া পড়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২শ’-এর অধিক পশু জেলা প্রশাসনের অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খামার থেকে জেলা প্রশাসনের লোকজন পছন্দের পশুর ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য আপলোড করে দেওয়া হয়। সঙ্গে বিক্রেতার মোবাইল নম্বর। পশু পছন্দ করে ক্রেতা-বিক্রেতা সমন্বয় করে কেনা-বেচা করেন। এর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হয়েছে। ঢাকার ক্রেতা ছিলেন বেশি।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানিতে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার আর মজুত রয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার। কোরবানির পশুর সামান্য ঘাটতি থাকলেও করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১০-১৫ ভাগ কোরবানি কমে যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধির যেন ব্যাঘাত না ঘটে সে কারণে অনলাইনে এবার পশু বিক্রি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে।’