নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণে কুমিল্লার তিনজন নিহত
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে এসি বিস্ফোরণে মারা যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ তিনজননের বাড়ি কুমিল্লায়। নিজ নিজ গ্রামে তাদের দাফন করা হয়েছে। ইমাম মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পুটিয়াজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা এ গ্রামেরই মৃত আব্দুস সোবহান।
মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বদরপুর গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। এ বিস্ফোরণে তার বড় ছেলে জোনায়েদও মারা গেছেন।
মৃত এই ৩ জনের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। দুটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারানোর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় ও তার ছেলে জোনায়েদ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুবরণ করে।
অপরদিকে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারি একই হাসপাতালের আইসিউতে শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মারা যান। রোববার নিহতদের নিজ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে নারায়নগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত মসজিদের ইমাম ইসলামিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারীর (৬০) লাশ কুমিল্লার মুরাদনগরে দাফন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পুটিয়াজুরি গ্রামের কবরস্থানে ওই লাশ দাফন করা হয়।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারী পুটিয়াজুরি গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা মাদরাসা থেকে দাখিল, বাখরনগর মাদরাসা থেকে আলিম ও ফাজিল এবং সোনাকান্দা মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন। মৃত্যুকালে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অনেক স্বজন ও শুভাকাঙ্খি রেখে গেছেন। নিহতের লাশ গ্রামের বাড়ি আসছে এমন খবরে আশ-পাশের কয়েক গ্রামের সহ¯্রাধিক লোক তাকে এক নজর দেখার জন্য জড়ো হয়।
নিহতের বৃদ্ধ মা কমলা খাতুন (৮২) অশ্রুসজল চোখে বলেন, দীর্ঘ ২২/২৩ বছর যাবত আমার ছেলে ওই মসজিদে ইমামতি করতেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে আমার প্রাণপ্রিয় ছেলের এমন মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় মৃত্যু দেখতে হবে কল্পনাও করি নাই। মনে হচ্ছে আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আপনারা সকলে আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
পুটিয়াজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ বলেন, মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারী যদিও স্বপরিবারে নারায়নগঞ্জ বসবাস করতেন, তবুও তিনি এলাকার সাধারণ মানুষ ও সামাজিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করতেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন ভদ্র ও বিনয়ী গুণের অধিকারী। আকস্মিক দূর্ঘটনায় তাঁর মর্মান্তিক মৃতুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তাঁর দাফন কাজে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য কর্মী আবুল কালাম আজাদ ও সিএইচসিপি সুমন সরকার বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিহতের লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি গ্রামের সব শ্রেণি পেশার মানুষের দু:খ-দূর্দশায় এগিয়ে আসতেন। তাই তাঁর মৃত্যুতে আমরা সকলেই শোকাহত।
এ দিকে নারায়নগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে রবিবার সকালে তাঁর নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে ওই শোক প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে নারায়নগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় এক বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ গুরতর অগ্নিদগ্ধ ৩৭ জনকে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে গত শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২১জন মারা যায়। বাকীদের অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানা গেছে।