কুমিল্লায় দখলে অস্তিত্ব সংকটে ডাকাতিয়ার জেলেদের
চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলা বিভক্তকারী ডাকাতিয়া নদী হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন মাছ শিকার। নদীটিতে চিওড়া ও কনকাপৈত ইউনিয়নের চিলপাড়া,আগুনশাইল,বামপাড়া বৈলপুর, কনকাপৈতের, মরকটা, তারাশাইল, জাগজুর,বুদ্দিন, পান্নারা, আগুনশাল চিওড়া চিলপাড়া, মলিয়ারা, গুনবতীর পরিকোটসহ নাঙ্গলকোট উপজেলার উপজেলার বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ সহ শত বছরে প্রাচীনতম জেলেপাড়া চান্দেরবাগ এলাকায় অংশে অবৈধ বাঁধ আর স্থানীয় অসাধু চক্রর নদী শাসনে ফলে জীবন-জীবিকা হুমকি মুখে পড়েছে প্রায় দেড় হাজার পেশাদার জেলেদের জীবন। নদীতে বাধঁ দিয়ে মৎস্য প্রকল্প নামে একাধিক সাইনবোর্ড ঝুলছে প্রায় দুই- তিন কিলোমিটার অংশ জুড়ে।সৃষ্টি হয়েছে ১০- ১২টি অবৈধ বাঁধ। প্রভাবশালীদের ভয়ে বিষয়টি মুখ খুলতে চাননা স্থানীয় জেলারা ।
এই বিষয় নাঙ্গলকোট উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন ,ডাকাতিয়া নদী আমরা পেনকালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষের কোনো অনুমিত আমরা দেয়নি।যারা অবৈধভাবে নদীতে প্রকল্প নামে মৎস্য খামার ভূয়া সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নির্বাহী অফিসের সহযোগিতা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।করা করা এইসব করছে বিষয়টি নিয়ে অভিযানে নামবো ।
নাঙ্গলকোট উপজেলা ডাকাতিয়া নদীর অংশে উত্তর রায়কোট ইউনিয়নের শত বছরের প্রাচীনতম জেলেপল্লী চান্দেরবাগ এলাকায়। পেনকালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার অজুহাতে প্রভাবশালীরা বছর পর বছর ডাকাতিয়া নদী দখল করে রেখেছে। সারা বছর মাছ শিকারের উপযোগী ডাকাতিয়া নদীর মাত্র কয়েকটি জলমহালের ১০ -১৫ একর জলাশয়ে পেনকালচার গড়ার অনুমতি নিলে ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে প্রায় শত শত একর জলমহাল। এই ডাকাতিয়ার ডাকারা প্রতিটি জলমহাল বাঁশ ও জাল দিয়ে ঘিরে কিছু মাছ ছাড়ার প্রহসন চালিয়ে সারা বছর মাছ ধরে রমরমা মৎস্য-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ দিনের। এই চক্র বাঁশ-জাল দিয়ে ঘেরা ডাকাতিয়া বিভিন্ন অংশে জলমহালে অন্য কোনো জেলে বা স্থানীয় জেলে নৌকা দিয়ে ঢুকতে দেন না । এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন চান্দেরবাগের জেলেপল্লী প্রায় পাঁচশ জেলে পরিবার।জীবন বাঁচতে এই পেশা ছেড়ে কেউ কেউ বেচে নিয়ে ডাকাতিয়া পাড়ে প্রভাবশালীদের বালু ও মাটি উত্তোলনে দৈনিক শ্রমিক হিসাবে।কিন্তু এই পল্লীর কানু মিয়া ,প্রেম কুমার,জাকির হোসেন মতো র্ষাট পেরনো বৃদ্ধ জেলেদের জীবনে জীবিকা নেমে এসে চরম বিপদয।করোনাকালী কোনো সময় কোন দিন একবেলা খেয়ে জীবনের চাহিদা মিটিয়েছে।চরবর্তী এই পল্লীতে দুই উপজেলার থেকে বিচ্ছিন্ন বলে পান তেমন কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পান না ।
বাবার হাত ধরে মাত্র দশ বছর বয়সে মাছ ধরতে নদীতে যাওয়া শুরু করেন চান্দেরবাগে প্রেম কুমার । ৪০ বছর ধরেই ডাকাতিয়া বুকে মাছ ধরছেন তিনি।সংসারে সুখের আশায় এখনও বৃদ্ধ বয়সে অবিরত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রেম কুমারের মতো কত জেলেই নদীতে ভেসে কাটান অধিকাংশ সময় আর জীবনের একটা সময় মনে করে জেলে পরিবারে জন্মই যেন অভিশাপ! মাছ ধরা, বিক্রি করা, তবুও কাটে না দুর্দশা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দারিদ্র্যের শিকলে বাঁধা তাদের জীবন। সম্প্রতি করোনা আর ডাকাতিয়া বুকে প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব কারণে আবার দুর্যোগের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পল্লীজুড়ে।
এক সময় ডাকাতিয়ার দু’পাশে গড়ে উঠে ছোট ছোট জেলে পাড়া। হাজার হাজার জেলেরা এ নদীতে মাছ ধরেই তারা জীবিকা নির্বাহী করতো।কালের বিবর্তনে ডাকাতিয়ার সেই জৌলুস হারিয়েছে। নদীতে নেই মাছ।বর্ষা মৌসুমে মূলত এ নদীর মাছই দুই উপজেলার বিভিন্ন চর,ছোট নদী, পুকুর, জলাশয়সহ সকল জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে বংশ বিস্তার করে। অপ্রতিরোধ্য ভেসালের আর অবৈধ বাধ সৃষ্টি ফলে সম্ভাবনাময় নদীর মাছের বংশ বিস্তার ধ্বংসের ধারপ্রান্তে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ডাকাতিয়া মাঝবর্তী চর এলাকায় চান্দেরবাগ সেই জেলে পাড়ার তেমন একটা অস্তিত্ব নেই বললে চলে। তাই অনেক জেলে মাছ ধরার বাপ-দাদার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে ভিন্ন পেশা বেঁচে নিয়েছে। তেমনি একজন হলেন চান্দেরবাগ বাস্তিন্দা স্বপন মিয়া।দুইযুগের বেশি সময় ধুরে ডাকাতিয়াতে নৌকা দিয়ে মাছ ধরতেন,নদীতে এখন প্রভাবশালীদের মৎস্য খামার আর অবেধ বাধে করনে নৌকা নিয়ে নদীতে নামতে পারেন না। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে আমরা ডাকাতিয়াতে নৌকা দিয়ে মাছ ধরতাম,কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা নদীতে বাঁশ ও জাল দিয়ে অবৈধভাবে ছোট ছোট বাঁধ সৃষ্টি করে মাছ চাষ করছে। এতে নদীতে এখন আর নৌকা চলার অবস্থা নেই। একসময় মাছ ধরা নৌকা গুলো এখন যাতায়াতে কাজে ব্যবহার হলে ও কমে গেছে জেলেপাড়ার নৌকাগুলো।জীবন চলাতে আমাগো অনেক কষ্ট হয়। দুই উপজেলা মাঝবর্তী হাওয়া আমাদের কেউ সহযোগিতা করে না। ভোটের সময় নেতাদের মুখ দেখি, ভোট গেলেগা তাদের আর খোঁজে পাওয়া যায় ।করোনা সরকার থেকে মানুষ কতকিছু পাইনো। আমাগো তো কিছু জুটলো না।
নাঙ্গলকোট উপজেলার উত্তর রায়কোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যার মাষ্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলেপল্লী জন্য সম্প্রতি মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। নাঙ্গলকোটের সাথে সংযোগের জন্য প্রায় ৬ কোটি ব্যায়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এই পল্লীতে একটি স্কুল নির্মান জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতায় জাল ও নারী কর্মসংস্থানের জন্য আমার সেলাই মেশিন দিচ্ছি।
নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন আমাদের এখানে এই ব্যাপারে অভিযোগ আসলে আমরা সাথে সাথে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করি।অবৈধভাবে মৎস্য চাষ নামে ব্যক্তি ও সরকারি জমি দখল নদীতে অবৈধ বাঁধ সৃষ্টি বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন নদী খালে বাঁধ সৃষ্টি করে সরকারি ভাবে কোনো অনুমতি দেওয়া হয় না জেলেপল্লীতে আমরা সবসময় বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করি ।