একুশে পদকপ্রাপ্ত কুমিল্লার শিক্ষানুরাগী হাজী আবুল হাসেমের ইন্তেকাল
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কৃতি সন্তান, গণপরিষদের সাবেক সদস্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত, দানবীর ও শিক্ষানুরাগী, মসজিদ-মাদরাসাসহ বাংলাদেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব আবুল হাসেম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশ ঘটিকার সময় ঢাকায় নিজ বাস ভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। তিনি ২ ছেলে ও ১০ মেয়ে সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন। ১৯২২ সালের ১১ই এপ্রিল উপজেলার রাজা চাপিতলা গ্রামের তিনি জন্ম গ্রহন করেন। তিনি এলাকায় দানবীর হাজী হাসেম নামে বেশী পরিচিত।
হাজী আবুল হাসেম সত্তরের দশকে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন। বঙ্গবন্ধুর মনোনয়নে ১৯৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর-হোমনা এলাকা থেকে জাতীয় গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে একুশে পদক সহ এপর্যন্ত অসংখ্য সম্মাননা পদক পেয়েছেন। মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৫৬ সালে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে বাবার নামে প্রথম বিদ্যাপিঠ বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯৬৪ সালে মুরাদনগর উপজেলার বাখর নগর হাশেমিয়া ইসলামীয়া সিনিয়র মাদরাসা, ১৯৭০ সালে কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ, চাপীতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭১ সালে মুরাদনগর নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হোমনা উপজেলায় কাশীপুর হাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭২ সালে হোমনার রামকৃষ্ণপুরে কামাল স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ফেনীর পরশুরামে দক্ষিণ রাজেসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ রাজেসপুর করিমিয়া মাদরাসা ও মসজিদ, ১৯৮৬ সালে হোমনায় রামকৃষ্ণপুর কলেজ, ১৯৯৩ সালে মুরাদনগরে সলপা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কচুয়ার পাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০০৩ সালে মুরাদনগরে অজিফা খাতুন জামে মসজিদ, ২০০৪ সালে ফুলগাজী দক্ষিণ রাজেশপুর থানা জামে মসজিদ ও ২০১০ সালে ঠাকুরগায়ের মিলনপুরে নুরুন্নহার হাশেম স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়াও তিনি মুরাদনগরের কামাল্লা হাফেজিয়া মাদরাসা, বাবুটিপাড়া চৌমুহনী হাফেজিয়া মাদরাসা, পাহারপুর মাদরাসা, খামারগ্রাম মাদরাসা, হোমনার রামকৃষ্ণপুর আকন্দপাড়া মাদরাসা, দৌলতপুর মাদরাসা, ব্রাহ্মণপাড়ার মাধবপুর মহিলা মাদরাসা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুরের চর লোহানীয়া মাদরাসা, হবিগঞ্জ মাধবপরের হরশপুর মাদরাসা, গাজীপুর টঙ্গীর ফয়দাবাদ মাদরাসা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ সোবাইদা চাঁনমিয়া মাদরাসা, আজীমপুর মাদরাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে তাঁর আর্থিক অনুদান রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি বহু দরিদ্রের সংসারের দায়িত্ব গ্রহন করেছেন, অসংখ্য শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার দ্বায়িত্ব নিয়েছেন, অসুস্থদের চিকিৎসা করিয়েছেন, অন্ধকে আলো দিয়েছেন, বেকারদের কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করেছেন।