কুমিল্লায় অক্সিজেন ও একটি বেড এখন সোনার হরিণ
৪৫ বছর বয়সী আছিয়া বেগম শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা পজেটিভ আসায় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তবে শয্যা খালি না থাকার কারণে বেলা ১২টা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সেই অক্সিজেন দিয়ে সেবা দেয়া হয় তাকে। পরে রোগীর স্বজনরা তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজসহ করোনা চিকিৎসা দেয়া সব হাসপাতালেই আইসিইউ, বেড ও অক্সিজেনের অভাবের বিষয়টি এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অক্সিজেন ও একটি বেড এখন রোগী ও স্বজনদের কাছে সোনার হরিণ।
কোরবানির ঈদের পর থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। এ অবস্থায় অক্সিজেন ও হাসপাতালে শয্যা পাওয়া রোগী ও স্বজনরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। রোগেীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ৯০ আসনের বিপরীতে ১০০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে।
৬০ বছর বয়সী আবদুস সাত্তার করোনা আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আছেন। বাবার জন্য কোনো রকমে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে পাশে বসে আছেন ছেলে অনিক।
তিনি বলেন, ‘কালকে হাসপাতালে এসেছি। একটা সিটও খালি নাই। কেউ না মরলে সিট খালি হয় না। খুব কষ্টে আছি বাবাকে নিয়ে।’
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের পর থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর ভিড় বেড়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো অক্সিজেন ও বেড নিয়ে এত হাহাকার আর দেখা যায়নি। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসছেন সেবা নিতে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক আসিফ ইমরান জানান, হাসপাতালে ১৭৬ জন রোগীকে আসন দেয়া সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে ১৪২ জন রোগীকে সেন্ট্রাল লাইন থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। আর বাকি ৩৪ জন অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। তবে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য এখন প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
জাগ্রত মানবিকতা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা জানান, সপ্তাহ দুয়েক ধরে রাত-দিন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ফোন আসছে। এত রোগীর জন্য অক্সিজেন সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন জানান, প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। আসন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিতে চেষ্টা করছেন।
কুমিল্লায় কেন এত রোগী বাড়ছে এমন প্রশ্নে মহিউদ্দিন জানান, প্রথমে জ্বর সর্দি হলে কেউ টেস্ট করান না। পরে যখন শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় তখন হাসপাতালে আসেন।
তিনি আরও জানান, আগে থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর সংখ্যা এত হতো না। এ ছাড়া অসচেতনতার কারণে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সূত্রঃ নিউজবাংলা