কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে গ্রাহকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শাখা ব্যবস্থাপক সরওয়ার আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালমুড়ি গ্রামের মৃত সালামত উল্লাহর ছেলে সোহেল আহমেদ (হিসাব নং-১৬০) আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের চৌদ্দগ্রাম শাখা ব্যবস্থাপক সওয়ার আলম তালুকদারের কাছে তিন লাখ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। এ সময় তিনি কৌশলে তার কাছ থেকে পূবালী ব্যাংক মিয়ারবাজার শাখার দুটি চেক জমা নেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি জানতে পারেন তার নামে দুই লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ঋণের টাকা তাকে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তিনি ১ আগস্ট চৌদ্দগ্রাম থানায় সরওয়ার আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবদুর রহমান (হিসাব নং-১৭৫১) ২০২০ সালের ১৬ জুন ২০ হাজার টাকা ঋণের আবেদন করেন। সরওয়ার আলম তালুকদার তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করে তাকে মাত্র ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। একই বছরের ১০ জুলাই তার স্ত্রী রহিমা বেগম (হিসাব নং-১৭৫২) ৩০ হাজার টাকা ঋণের জন্য অবেদন করলে তিনি দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা মঞ্জুর করেন। তবে তাকে দেওয়া হয় মাত্র ৩০ হাজার টাকা। বিষয়টি জানাজানি হলে সরওয়ার আলম তালুকদার ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের ওপর দায় চাপান।
এছাড়া ওই দম্পতি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে ছয় লাখ টাকার সঞ্চয় করেন। কিন্তু মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের ১২ আগস্ট দুই লাখ এবং ২০২০ সালের ২৫ মার্চ দুই লাখ টাকা প্রদান করা হলেও বাকি মূলধন ও মুনাফা দেয়া হয়নি।
একটি সঞ্চয় হিসাব চালু করেন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের প্রবাসী এস এম শফিউল আজম ২০১৪ সালে। যার নম্বর ১৫৪১। গত ৩ আগস্ট তিনি ব্যাংকে গিয়ে সঞ্চয়ের টাকার হিসাব চাইলে তাকে জানানো হয় ২০২০ সালের ৫ মার্চ সঞ্চয়কৃত ২৭ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি চমকে উঠেন। পরে বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. আইয়ুব হোসেন খান ব্যাংকের লেজার এবং গ্রাহকের স্বাক্ষরিত মিলিয়ে দেখেন তার স্বাক্ষর নকল করে ২৭ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক বর্তমান ম্যানেজার সরওয়ার আলম তালুকদারকে অবগত করলে তিনি ওইদিনই গ্রাহককে টাকা ফেরত দিয়ে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে সরওয়ার আলম তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। তাদেরকে ঋণের টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে প্রবাসী শফিউল আজমকে কেন টাকা ফেরত দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি থাকাকালীন সময়ে এ টাকা উত্তোলন হয়েছে। তাই তাকে ফেরত দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছি।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. আইয়ুব হোসেন খান বলেন, গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে সরওয়ার আলমের অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের কুমিল্লা আবাসিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, সরওয়ার আলম তালুকদারের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) এস এম মঞ্জুরুল হক বলেন, ব্যাংকের বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অনিয়ম প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।