কুমিল্লায় অনিশ্চয়তায় এতিমখানার ৭ হাজার শিশু
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুস্থদের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দ বাতিল হওয়ায় কুমিল্লায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে প্রায় তিনশ বেসরকারি এতিমখানার ৭ হাজার দুস্থ শিশু। তারা এখন ঠিকানাবিহীন হয়ে পড়েছে। এতিমখানাগুলোতে এতিম শিশুর পাশাপাশি বড় সংখ্যায় দুস্থ শিশুরা অবস্থান করায় জেলার বেসরকারি এতিমখানাগুলো এখন বিপাকে পড়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্তের কারণে দুস্থ অসহায় শিশুদের এখন ছাড়তে হবে এতিমখানা। এসব দুস্থ শিশুর ঠিকানা কোথায় হবে এবং এদের দায় কে নেবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এ অবস্থায় নতুন নিয়ম সংশোধন এবং ২০১৩ এর নীতিমালা বাস্তবায়নসহ এতিমখানাগুলোতে অধ্যয়নরত ৮০ ভাগ নিবাসীকে ক্যাপিটেশনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছে বেসরকারি এতিমখানা কল্যাণ পরিষদ।
জানা যায়, ১৯৪৪ সালের এতিমখানা ও বিধবা সনদ আইন অনুযায়ী পিতা-মাতা এবং আইনগত অভিভাবকহীন ১৮ বছরের কম বয়সের বালক-বালিকাকে এতিম হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০১৩ সালের নীতিমালায় এতিমদের পাশাপাশি সমাজের ১৪ ধরনের অবহেলিত শিশুকে দুস্থ অসহায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে অভিভাবকহীন এসব শিশু দেশের ক্যাপিটেশনপ্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানাগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এতে হাজার হাজার অভিভাবকহীন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর শিক্ষা এবং বাসস্থানের ঠিকানা হয়। ২০১৫ সালে নতুন নীতিমালায় এতিমখানাগুলোতে অধ্যয়নরত ৫০ ভাগ শিশুর ক্যাপিটেশন কেটে দেওয়া হয়। এরপর থেকে দেশের অধিকাংশ এতিমখানা বেকায়দায় পড়ে। তারপরও সামাজিক নানা সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনোভাবে চলছিল এতিমখানাগুলো। গত একমাস আগে সমাজসেবা অধিদপ্তর ফের নতুন নিয়ম চালু করে। এতে শুধু এতিম ছাড়া অন্য দুস্থদের ক্যাপিটেশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ নিয়মে সমাজের ১৪ ধরনের অবহেলিত দুস্থ শিশুর কলামটি বাদ দেওয়া হয়। যার ফলে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ২৭৩টিসহ সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার বেসরকারি এতিমখানায় এতিমদের সঙ্গে অধ্যয়নরত লাখ লাখ দুস্থ নিবাসী অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু এতিমখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এতিমখানায় এতিমের সঙ্গে বড় সংখ্যায় দুস্থরা অবস্থান করছে। কিছু এতিমখানায় দুস্থদের সংখ্যাই বেশি। সরেজমিনে মুরাদনগর উপজেলার রহিমপুর হেজাজিয়া এতিমখানায় দেখা যায়, সেখানে অধ্যয়নরত অধিকাংশ দুস্থ শিশু এতিমদের চাইতে অনেক অসহায়। নানা কারণে তাদের দায়িত্ব গ্রহণের মতো অভিভাবক নেই। একই চিত্র অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের।
এদিকে এ দুস্থদের ক্যাপিটেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এতিমখানা ছেড়ে তারা কোথায় আশ্রয় নেবে, কে খাওয়াবে, কে পরাবে, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এতিমখানাগুলোর পরিচালকরা।
বেসরকারি এতিমখানা কল্যাণ পরিষদের কুমিল্লা শাখার সভাপতি হাফেজ বাশারত ভূঁইয়া বলেন, ‘সমাজে এতিমের সংখ্যা খুবই কম, আর এতিমদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো অনেক স্বজনই এগিয়ে আসেন, কিন্তু অভিভাবকহীন দুস্থদের পুনর্বাসনে কেউ এগিয়ে আসেন না। তারা এতিমদের চাইতেও অসহায়। নতুন নিয়মে আমরা আর দুস্থদের রাখতে পারব না, যার ফলে অধিকাংশ এতিমখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘নতুন যে নিয়মটি চালু করা হয়েছে সেটি নীতিমালা নয়, এটি নতুন একটি ছক। এ ছকে সমাজের দুস্থরা বেসরকারি এতিমখানায় আর ক্যাপিটেশন সুবিধা পাবে না। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’