বহুমুখী সংকটে কুমিল্লা ইপিজেড
ডেস্ক রিপোর্টঃ অবকাঠামোগত নানা সমস্যাসহ বহুমুখী সংকটে কুমিল্লা ইপিজেডের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ক্রমাগত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট, শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য শিল্প প্লট সংকুলান না হওয়া, স্থানীয় শিল্পে উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়া, কঠোর নিয়ম-কানুন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় এবং অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানান কারণে এ ইপিজেডে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা যায়, কুমিল্লা ইপিজেডে বর্তমানে ২৩৯টি প্লট রয়েছে। ২০১৩ সালে একটি প্রস্তাব হয়েছিল সীমানা বাড়িয়ে ৫৩১টি প্লট করার। বিশ্বব্যাংক সেখানে ভূমি সম্প্রসারণের অর্থায়ন করবে। কিন্তু চার বছর অতিক্রম করলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লা ইপিজেডে আগ্রহী বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কর্মরত বিদেশি লোকদের সঠিক আবাসন এবং আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের বিভিন্ন সময়ের বেতনভাতা ও দাবি আদায়ের আন্দোলনের সুযোগ নেয় বহিরাগতরা। এতে করে কারখানার মালিকরা ক্ষতির শিকার হন।
কুমিল্লা ইপিজেড বেপজার মহাপরিচালক মো. তানভীর হোসাইন জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি স্থানে কুমিল্লা ইপিজেডের অবস্থান হওয়ায় পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ইপিজেড থেকে সামগ্রিক বন্দরে যোগাযোগে সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সুলভে কাঁচামাল পাওয়া যায়। শ্রমিকও সহজলভ্য। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এর প্রতি আগ্রহী ছিল।
তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগী ভূমিকায় কুমিল্লা ইপিজেডকে দেশের এক নম্বর ইপিজেডে রূপান্তর করা সম্ভব। কারণ ইপিজেডের পাশেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বিমানবন্দর। যদি ইপিজেড সম্প্রসারণ, শিল্প প্লট তথা স্থান সংকুলান সমস্যার সমাধান হয় এবং ছোট পরিসরে হলেও ইপিজেডের সঙ্গে বিমানবন্দরটি চালু করা যায় তাহলে রফতানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।’
বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেপজার সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের ১৫ জুলাই কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকার ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই ইপিজেডে দেশি, বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগীসহ সর্বমোট ৪২টি পণ্য উৎপাদিত কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি রয়েছে ২৩টি, দেশি ও বিদেশি যৌথ কোম্পানি রয়েছে সাতটি এবং বাংলাদেশি কোম্পানি রয়েছে ১২টি। এই ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, ব্রিটেন, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ১৩টি উন্নত দেশে রফতানি করা হয়। এখানে ইটিপি’র আওতায় ইপিজেডের ৪২ কোম্পানির বর্জ্য পরিশোধন করা হয়।
বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডের ৪২টি কোম্পানিতে ২৮ হাজার ৫৬৮ জন পুরুষ ও নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এছাড়া ১৯৫ বিদেশি কর্মরত রয়েছেন।
মো. তানভীর হোসাইন আরও জানান, কুমিল্লা ইপিজেডে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৩৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে।
এ ইপিজেডে গ্লোবাল ব্র্যান্ড, ক্যানন ক্যামেরার ব্যাগ, ফটোকপিয়ার ড্রাম উৎপাদন করা হয়। এছাড়া সোয়েটার, ডেনিম ফেব্রিকস, গার্মেন্টস, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, এইচএনএম, সিএন্ডএ, জুতা, জিপার, সুতা, পলিব্যাগ, প্লাস্টিক সামগ্রী ও কাপড় ছাড়াও রয়েছে ব্যতিক্রম পণ্য হেয়ার এক্সেসরিজ, মেডিসিন প্লেনার বক্স ও খেলনা তৈরির কারখানা।
বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (বেপজা) মহাব্যবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, ‘কুমিল্লা ইপিজেডে পণ্য উৎপাদনে নতুন নতুন কারখানা যোগ হয়েছে। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী শিল্প প্লটের অভাব রয়েছে। এই ইপিজেড সম্প্রসারণ করতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়বে।’
সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন