কুমিল্লার জেলার সংসদীয় আসনে বড় পরিবর্তন !
ডেস্ক রিপোর্টঃ সংসদের অর্ধশত আসনের সীমানা পরিবর্তন করে খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান সীমানায় যেসব আসনে খণ্ডিত উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের খণ্ডিত ওয়ার্ড রয়েছে, তা একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আসনগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই কমিশন সভায় প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদনের পর গেজেট প্রকাশ করা হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সীমানা বিন্যাস কমিটির দীর্ঘ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। বৈঠকে ইসির নিয়োগ করা পরামর্শক সাবেক যুগ্ম সচিব লুৎফর রহমান ও জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রতিনিধিসহ কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কে. এম. নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপে সীমানা নির্ধারণে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে নতুন আইনে সীমানা বিন্যাসের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ইসি সে ঘোষণা থেকে সরে এসে বিদ্যমান ‘ডিলিমিটেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬’-এর আওতায় সীমানা বিন্যাস করতে যাচ্ছে। ইসির নীতিমালায় আসন পরিবর্তন কোনোভাবেই এক জেলার অংশ অন্য জেলায় যুক্ত করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে প্রশাসনিক অখণ্ডতার সঙ্গে জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হলেও তা পুরোপুরি সফল হয়নি। এবারের খসড়ায় প্রশাসনিক বিন্যাসকেই গুরুত্ব দেওয়ায় উপেক্ষিত রয়ে গেছে জনসংখ্যার বিষয়টি। বর্তমানে গাজীপুরে সর্বোচ্চ একটি আসনে সাড়ে সাত লাখ ভোটার রয়েছে, আবার সবচেয়ে কম পৌনে দুই লাখ ভোটার রয়েছে ঝালকাঠির একটি আসনে।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ম্যানুয়াল সিস্টেমে কমিশন যে খসড়া প্রস্তুত করেছিল, তা শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। কারণ জিআইএস দেখে প্রশাসনিক যোগাযোগ রক্ষার্থে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলার একটি আসনের বিদ্যমান সীমানা সম্পর্কে আদালতের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে আপিলও করা হয়েছে। রায় পক্ষে গেলে কী হবে এবং বিপক্ষে গেলে কী হবে দু’ধরনের প্রস্তুতি খসড়ায় রাখা হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, কুমিল্লা-১০ আসন নিয়ে অনেক আগ থেকেই বিতর্ক ছিল। আদালতের রায় মেনে এই আসন পুনর্বিন্যাস করতে হলে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮, কুমিল্লা-৯ ও কুমিল্লা-১০ আসনের বিদ্যমান সীমানা পরিবর্তন করা হবে। আপিলে রায় কমিশনের পক্ষে এলে শুধু কুমিল্লা-৯ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে।
এ ছাড়াও বিদ্যমান সীমানায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি, নারায়ণগঞ্জ সিটি, চট্টগ্রাম সিটি, কুমিল্লা সিটিসহ বেশ কয়েকটি জেলায়। এর বাইরে বিদ্যমান সীমানায় লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও ঢাকা জেলাসহ যেসব এলাকার উপজেলা খণ্ডিত অবস্থায় একাধিক আসনে রয়েছে, সেগুলো একত্রিত করা হয়েছে। এমন ৬৩টি আসনকে ইসির পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে গতকাল জিআইএসের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পাঁচ থেকে সাতটি আসনের সীমানায় খণ্ডিত উপজেলাও রাখতে হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব আসন যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইল জেলার মধ্যে। এর বাইরে ছিটমহল যুক্ত হওয়া জেলাসহ তিনটি নতুন প্রশাসনিক উপজেলা ওসমানীনগর, কর্ণফুলী ও লালমাইকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গতকালের বৈঠকের পর ইসির একজন কর্মকর্তা জানান, খসড়া তালিকায় শেষ মুহূর্তের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলতি সপ্তাহেই কমিশন সভায় উত্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পাওয়ার পরই খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করে দাবি-আপত্তির জন্য আবেদন চাওয়া হবে। যেসব এলাকার সীমানা পরিবর্তন করা হচ্ছে, সেখানকার ভোটাররা এ বিষয়ে লিখিত আকারে তাদের আপত্তি কমিশনে দাখিল করতে পারবেন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের পর কোনো আদমশুমারি না হওয়ায় এবার সীমানা পুনর্নির্ধারণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কিছু ছিটমহল যুক্ত হওয়া, নতুন কিছু প্রশাসনিক ইউনিট সৃষ্টি, নদী ও সমুদ্র ভাঙনের কারণে কোনো কোনো প্রশাসনিক ইউনিটের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিলুপ্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং প্রশাসনিক ইউনিটের যথাসম্ভব অখ তা বজায় রাখার স্বার্থে বর্তমান সীমানায় এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
নতুন সীমানায় একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসির ঘোষিত রোডম্যাপে গত নভেম্বরের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের নতুন সীমানার খসড়া তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সে হিসাবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। কোনো কারণে সংসদ ভেঙে নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আরও তিন মাস সময় পাবে ইসি।
এর আগে ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল বিদ্যমান সীমানা বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল। অন্যদিকে ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফেরার প্রস্তাব করেছিল বিএনপি।
সূত্রঃ সমকাল