কুমিল্লায় ইউএনও’র সিম ক্লোন করে প্রতারণার চেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্টঃ এবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়মের সরকারি নম্বর ক্লোন করে টাকা আদায়ের চেষ্টা হয়েছে। উপজেলার ২০ জনেরও বেশি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সন্দেহ হলে নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে।
তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রতারণার বিষয়টি অবহিত করে ফাঁদে পা না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুরাদনগরের ইউএনও।
সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য নিজের ফেসবুকেও একটি পোস্ট দিয়েছেন মিতু মরিয়ম। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমার ইউএনও মুরাদনগর এর অফিশিয়াল ফোন নম্বরটি (০১৭৩৩৩৫৪৯৪৩) ক্লোন হয়েছে। নম্বরটি থেকে ফোন করে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের কথা বললে সেটি না করতে সকলকে অনুরোধ করা হলো।’
মিতু মরিয়ম জানান, আজ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভার বৈঠকে থাকা অবস্থায় দুইজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফোন করে জানান তার অফিশিয়াল নম্বর থেকে তাদের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে।
মিতু বলেন, ‘বলা হয়েছে আমার মা অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য টাকা দেয়ার জন্য। পরে তাদের সন্দেহ হলে আমাকে ফোন করলে বিষয়টি ধরা পরে।’
মিতু বলেন, ‘গত ১৯ জানুয়ারি আমি মুরাদনগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। জানতে পেরেছি যারাই এখানে নতুন আসেন তাদের ফোন ক্লোন করে একটি চক্র এমন প্রতারণা শুরু করে। আমিও যেহেতু নতুন এসেছি যে কারণে হয়তো এই চক্রটি প্রতারণা করার চেষ্টা করে।’
মুরাদনগরে ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের বেশিরভাগ চেয়ারম্যানকে এভাবে ফোন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন মিতু। বলেন, ‘কিন্তু যেহেতু আমি নারী কর্মকর্তা তাই পুরুষ কণ্ঠে তাদের কাছে ফোন যাওয়ায় তাদের কাছে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে।’
মিতু জানান, প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করার প্রক্রিয়া চলছে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম বদিউজ্জামান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাকে জিডি করার পরামর্শ দিয়েছি। পরে আমরা এ ব্যাপারে কাজ করব।’
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মোবাইল সিম ক্লোনিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ প্রধানের ব্যক্তিগত যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, হুবহু একই নম্বর থেকে ঢাকা মহানগরের একটি থানায় ফোন করে আসামি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রতারকরা বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবহার করছে। পরে সিম ক্লোনিংয়ের বিষয়টি প্রমাণ পাওয়া যায় তদন্তে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সিম ক্লোন করতে বিশেষ ধরনের সফটওয়ার ব্যবহার করে প্রতারকরা। এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সিমের নিরাপত্তায় করণীয় নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট চার জনকে, চলতি ১৪ জানুয়ারি শহীদুল ইসলাম সাইদুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এই চক্রের অন্যতম হোতা বলে জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে একই মাসের ৩০ তারিখ এই চক্রের আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও প্রতারকদের এই কাজ থেমে নেই। গত ২৩ নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মোবাইল সিম নম্বর ক্লোন করে একইভাবে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।
সূত্রঃ ঢাকাটাইমস