৭ মাস ধরে সৌদির মর্গে পড়ে আছে কুমিল্লার এক যুবকের মরদেহ

উন্নত জীবন ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণে প্রবাস জীবনে পাড়ি দেওয়ার পাঁচ মাসের মাথাই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় নুর মোহাম্মদ আকাশ নামর কুমিল্লার এক যুবকের। মৃত্যুর সাত মাস পার হলেও মরদেহ দেশে আনতে পারেনি পরিবার। সেখানকার একটি হাসপাতালের মর্গে মরদেহটি পড়ে আছে।
নিহত নূর মোহাম্মদ আকাশের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আন্দিকোট ইউনিয়নের সোনারামপুর গ্রামে। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবের জিয়াদ শহরের একটি পেট্রোল পাম্পে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মারা যান তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সৌদি আরব যান আকাশ। সৌদি আরবের জিয়াদ এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে চাকরি হয় তার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে ওই পেট্রোল পাম্পে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আকাশ। তার মরদেহটি জিয়াদ এলাকায় একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে।
এদিকে আকাশকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছেন তার মা সাহিদা বেগম। জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাঠানো ছেলেটা মরদেহ হয়ে মর্গে পড়ে থাকার জন্য সাহিদা বেগম যেন নিজেই বেঁচে আছেন জ্যান্ত মরদেহ হয়ে।
আকাশের মা সাহিদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে কলিজার টুকরা ছেলেটা বিদেশে গেছে। অথচ সে আর জীবিত নেই। আমার বুকের ধন বিদেশের বুকে মরদেহ হয়ে পড়ে আছে। আপনারা আমার বুকের ধনকে এনে দেন যেন তার মরদেহটি ধরে কাঁদতে পারি, তারে শেষ বিদায় দিতে পারি।
আকাশের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ধারদেনা করে ছেলেটাকে বিদেশে পাঠিয়েছি। সে ঋণগুলোও রয়ে গেল, ছেলেটাও নেই। কী করব? কোথায় যাব? ছেলের মরদেহ ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেছি। আদালত বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ছেলের মরদেহটি পাইনি।
আন্দিকোট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব জাকির হোসেন বলেন, ছেলের মরদেহ পাওয়ার জন্য নিহতের বাবা আদালতে একটি মামলা করেছেন। আদালত দেখতে পান নিহত আকাশের পাসপোর্টে জন্ম সাল ২০০২ করা। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে মৃত্যু সনদে জন্ম সাল দেওয়া ছিল ২০০৯। এ বিষয়ে আদালত আমাদেরকে ডেকেছিলেন। আমরা আমাদের রেকর্ডবুক খুলে ২০১৪ সালে করা আকাশের জন্মনিবন্ধনের নথি দেখালে আদালত থেকে সসম্মানে চলে যেতে বলেন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছি পরিবারটি যেন লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মারুফ আহমেদ নামের এক জরিপ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের স্যারের বাবা অসুস্থ। তিনি ছুটিতে আছেন। এই বিষয়টি স্যার ভালো বলতে পারবেন।