কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটারে কয়েক হাজার গর্ত
আবদুর রহমানঃ শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে সোনারগাঁ গিয়েছিলেন কুমিল্লার লাকসামের বিজরা রহমানিয়া চির সবুজ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা। সারাদিন ঘুরাঘুরি আর আনন্দে দাঁবড়ে বেড়ালেও শেষটা ভালো হয়নি ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। কারণ বিকেলে ফেরার পথে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে জেলার লালমাই উপজেলার মগবাড়ি এলাকাতে শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসকে পড়তে হয়েছিল দুর্ঘটনার কবলে। গর্তে ভরা ওই আঞ্চলিক মহাসড়কে হেলেদুলে চলার এক পর্যায়ে বাসটির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন চালক। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা এটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন ঘটনা শুধু ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই নয়, ওই আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যানবাহনের চালক ও সাধারণ মানুষকে। বর্তমানে অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কোন সুস্থ মানুষ ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেই সে অসুস্থ হয়ে পড়বে! এছাড়া এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা গাড়িতে উঠেন দোয়া-দরুদ পড়ে। যাত্রীদের কাছে ৭০ কিলোমিটারের কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি এখন দুর্ভোগের অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো সড়কে রয়েছে কয়েক হাজার গর্ত, যার কারনে যানবাহন চলে শম্ভুক গতিতে-হেলেদুলে। আগে কুমিল্লা-চাঁদপুর যাতায়াতে দুই ঘন্টা সময় লাগলেও এখন সেই পথ যেতে সময় লাগছে অন্তত পাঁচ ঘন্টা। এছাড়া সড়কের এমন বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যানবাহন ও যাত্রীরা। অথচ এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, রামগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো মানুষ প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মহাসড়কটিতে এই বেহাল অবস্থা বিরাজ করলেও এর স্থায়ী কোন সমাধান পাননি যাত্রীরা। তবে সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তারা বলছেন সড়কটিতে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। শীগ্রই ঘটবে এই সমস্যার অবসান।
সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটা দীর্ঘ এই আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে রয়েছে ছোট-বড় কয়েক হাজার গর্ত। বিশেষ করে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার, পদুয়ার বাজার হাজারী ফিলিং স্টেশন এলাকা, বিজয়পুর, লালমাই, মগবাড়ি, বিজরা, পরানপুর, মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজার, জগতপুর, উয়ারুক, হাজীগঞ্জের কিছু অংশ, বাকিলা, মহামায়া, ওয়ারলেস বাজার, ষোলঘরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সবচেয়ে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।
কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরগামী একটি বাসের চালক মো.কামাল হোসেন বলেন, এই সড়কটি গত কয়েক বছর ধরেই এমন বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারে স্থায়ী কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গত বর্ষাতে সড়কটি আরো বেহাল হয়ে বড় বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে অনেক সময় গাড়ি আটকে বিকল হয়ে যায়।
লালমাই হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট মো.ইব্রাহিম খলিল বলেন, এই আঞ্চলিক মহাসড়কের সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার (বিশ্বরোড) থেকে চাঁদপুর জেলার সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত আমাদের দায়িত্বে। অনেক সময় দেখা গেছে কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে বেহাল ও ভাঙা সড়কের কারনে জরুরী প্রয়োজনে সঠিক সময়ে আমাদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না। আমরা এই দুর্ভোগের কথা প্রতি মাসেই লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।
বিজরা রহমানিয়া চির সবুজ স্কুল ও কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, পুরো সড়কেই যেন গর্তের মিছিল। যার কারনে বাসগুলো চলে ধীর গতিতে আর হেলেদুলে। আর বাসে উঠলে বার বার মনে হয় এই বুঝি বাসটি উল্টে পড়ছে! কিছুদিন আগে আমাদের পিকনিকের বাস উল্টে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
মো.মাইন উদ্দিন নামে কুমিল্লার একজন মাইক্রোবাস চালক বলেন, এই রুটে এতো খাদ আর ভাঙা যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। গাড়ির গতি বাড়ালেই লাফালাফি শুরু করে। এক কথায় বলতে গেলে এই সড়ক নিয়ে গাড়ি চালকরা অবর্ননীয় দুর্ভোগে রয়েছে।
এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত বাসে চলাচলকারী যাত্রী মো.আবদুল কাহ্হার রাতিন বলেন, আগে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা যেতে ২ ঘন্টা বা সর্বোচ্চ আড়াই ঘন্টা লাগতো। আর এখন সেখানে সময় লাগে ৫ ঘন্টার বেশি। যাতায়াতকালে আমরা গাড়িতে উঠি দোয়া-দরুদ পড়ে। এছাড়া এই সড়ক দিয়ে জার্নি করার পর শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে এই সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করলে।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের অন্তত ৫ জন চালক জানান, সড়কটি ভাঙা আর গর্তে ভরা থাকায় ঘন ঘন গাড়িগুলো বিকল হয়ে পড়ছে। যার কারনে এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। সত্য কথা বলতে গেলে যাত্রীরা এখন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতেই ভয় পায়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের কার্যকরী সভাপতি মো. আবদুল হক বলেন, দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। এখানে যানবাহন প্রতিনিয়ত বিকল হয়ে যাচ্ছে। একটি প্রাইভেট রেন্ট-এ কারও নষ্ট হওয়ার ভয়ে এই সড়কে যাতায়াত করতে চায় না।
এ প্রসঙ্গে চাইলে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, কুমিল্লা অংশের সড়ক প্রশ্বস্তকরণ এবং সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে।
আর সড়ক ও জনপদ (সওজ) চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত বলেন, ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুরের অংশেও সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।