মা স্কুলের আয়া-বাবা রঙমিস্ত্রি! ছেলে পেল জিপিএ ৫

ডেস্ক রিপোর্টঃ দিন-মজুর বাবা-মা’র কষ্টার্জিত টাকায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ছেলে কামরুজ্জামান তিতাস। ছেলের ভাল ফলাফলে উল্লাসিত বাবা-মা এখন তার ভবিষ্যত নিয়ে দেখছেন অন্ধকার। কারণ,যেখানে সংসারের গ্লানী টানতে তাদের হিমসিম খেতে হয় সেখানে ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় পড়াবেন কিভাবে ? আজ সোমবার সকালে কুমিল্লা জিলা স্কুলে গিয়ে মেধাবী ছাত্র তিতাসের বা-মার সাথে কথা বলে তার উৎকন্ঠা জানতে পারা যায়।

রোববার ছেলের পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়া শুরু হয়েছে এ কথা শুনেই স্কুলের পিছনে ঝাড়ুর কাজ ফেলে দৌঁড়ে আসে প্রধান শিক্ষকের কাছে। কুমিল্লা জিলা স্কুলে আয়ার কাজ করা সাকেরা বেগম এসেই জানতে চায়, আপা- ও আপা আমার ছেলে পাস করছেনি? রোববার বেলা সাড়ে ১২ টায় স্কুল প্রাঙ্গণে যখন প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার ফলাফল ঘোষণা করছিলেন তখনই উদ্বিগ্ন সাকেরা বেগম কাজের মধ্যেই ছুটে এলেন ছেলের ফলাফল জানতে। জিজ্ঞেস করলেন আপা- ও আপা আমার ছেলের রেজাল্ট কি? উত্তর শুনে আনন্দে কেঁদে ফেললেন তিনি। ছেলে কামরুজ্জামান তিতাস কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এ প্লাস পেয়ে পাস করেন। ছেলের ভালো ফলাফলের কথা শুনে কাজ ফেলেই স্কুলে চলে আসেন পেশায় রং মিস্ত্রি বাবা নিজাম হোসেন। আনন্দে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।

ভালো ফলাফলে আনন্দিত তিতাস জানায়, তার ভালো ফলাফলের নেপথ্যে তার বাবা-মায়ের পরিশ্রম,পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার আন্তরিকতা। সে তার মায়ের স্বপ্ন আর বাবার পরিশ্রমকে স্বার্থক করতে সব সময় অঙ্গীকারবদ্ধ।

রং মিস্ত্রি নিজাম হোসেনের অনুভূতি জানতে চাইলে খুশিতে কেঁদে উঠে বলেন, নিজের জীবনে যা করতে পারেননি আজ ছেলে যখন তা করছে সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

মা সাকেরা বেগম আনন্দানুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, গত বছর যখন এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয় তখন থেকেই আমার টেনশন শুরু হয়। কি রেজাল্ট জানি করে আমার ছেলেটা। তিতাস যখন ক্লাশে লেখাপড়া করতো আমি আড়াল হয়ে দেখতাম। স্কুলে চাকরি করি আর ছেলেটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আল্লায় আমার পোলাডারে ভালো রেজাল্ট দিছে।

এবার ছেলের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত সাকেরা বেগম জানান, আমার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে তুষারকে তার এক চাচা চুক্তিভিত্তিক কাজে বিদেশ নিয়ে গেছে। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে নিয়েছে। এ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ঘরে টাকা পয়সা দিতে পারবেনা। মেঝো ছেলে তিতাস এবার এসএসসি পাস করলো। আর এক মেয়ে নিশি কুমিল্লা হাই স্কুলে পড়ে। এ মুহূর্তে সাকেরা বেগম বড় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো নিয়ে। এছাড়াও তার কোমড়ের একটি হাড় ভেঙ্গে গেছে আর একটি হাড় ক্ষয়ে গেছে। নিজের চিকিৎসা খরচের সাথে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। এদিকে স্বামীর আয়ও সীমিত। যা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চলে না।

বাবা-মা এ প্রতিবেদককে কান্না জর্জরিত কন্ঠে বলেন, বাবারে ছেলেটা তো পড়তে চায়। কিন্তু তার ভবিষ্যত তো অন্ধকার দেখছি বাবা। দু বেলা তো খেতেও পারতেছি না। তাকে পড়াব কিভাবে। বাবা-মা দ্বয় তিতাসের পড়াশুনার জন্য সমাজের বিত্ত্ববানদের প্রতি আহবান জানান।

আরো পড়ুন