কুমিল্লায় কলেজের পুনর্মিলনী ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ, অসন্তোষে সাবেক শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ফজলুর রহমান মেমোরিয়াল কলেজ অব টেকনোলজির পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, হিসাব–গরমিল, অর্থ আত্মসাৎ এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ এনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব অভিযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে আলাপ করতে দেখা যায়, এই ধরনের বেশ কিছু স্ক্রিনশট ও ছবি “Ooo Tai” নামক ফেসবুক পেইজ ঘেটে পাওয়া যায়।
কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে “রাজনীতি–মুক্ত” বলে দাবি করলেও, রি–ইউনিয়ন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক (ম্যাগাজিন) রাজনৈতিক নেতাদের শুভেচ্ছা বার্তা ও ছবিতে পরিপূর্ণ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, রাজনীতি–মুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এত প্রাধান্য কেন—এটি স্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
অন্যদিকে, কলেজের এক শিক্ষক ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ রবিউল আলম নিজের রাজনৈতিক প্রচারণার স্বার্থে ম্যাগাজিনকে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ, আয়োজনের নামে “প্রহসন” করা হয়েছে। মেন্যুতে ‘কাচ্চি বিরিয়ানি’ ঘোষণা করা হলেও পরিবেশন করা হয়েছে নিম্নমানের মোরগ পোলাও, যা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে এমন বেশ কয়েকজনকে দেখা গেছে যারা কখনোই কলেজটির শিক্ষার্থী ছিলেন না। বিশেষত, শিবির–সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের উপস্থিতি অনেক সাবেক শিক্ষার্থীকে বিস্মিত করেছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আরও জানান, স্পন্সর হিসেবে জিহান গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থ সংগ্রহ করা হলেও তার স্বচ্ছ হিসাব উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে আয়োজক কমিটি।
এছাড়াও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে লটারির আয়োজনেও, অংশগ্রহণকারীরা বলেন এক শিক্ষক (ইউসুফ স্যার) নিজের নামে অসংখ্য টিকিট বক্সে ফেলে লটারির ফল নিজের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়েও তীব্র অভিযোগ উঠেছে আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে, অঅভিযোগে বলা হয়, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় “প্রিয়সী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামে এক প্রতিষ্ঠানকে। অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সুলেমান হাসান বাপ্পি রি–ইউনিয়ন কমিটির সদস্য হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেন এবং মাত্র ২০ হাজার টাকার কাজের বিপরীতে ২ লাখ টাকার বিল তৈরি করেন।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই ভুয়া বিল কলেজের শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন অনুমোদন করেন। এই অর্থ আত্মসাতে বাপ্পি, আকশার, জুয়েলসহ কমিটির আরও কয়েকজন সদস্য প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
তদন্তের দাবি
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি আনন্দঘন পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করে এমন দুর্নীতি খুবই দুঃখজনক। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
