মহাজোটে আসন দ্বন্দ্ব কুমিল্লায়
ডেস্ক রিপোর্টঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৪টিতে মহাজোটের প্রার্থীতা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। জেলার মর্যাদাপূর্ণ এ আসনগুলোতে জোটের প্রধান দুই শরিক দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। নির্বাচনে প্রার্থীতার বিষয়ে অনড় অবস্থানে থেকে দু’দলের নেতা-কর্মীরাই যুক্তি তুলে ধরছেন নিজেদের পক্ষে। চলছে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই; পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ।
জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের আসন ভাগাভাগিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোটের কাছে যে ৫০টি আসন চেয়েছেন এর মধ্যে কুমিল্লার চারটি আসন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস), কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর), কুমিল্লা-৪(দেবীদ্বার) এবং কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসন।
২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ চারটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে কুমিল্লা-২ ও কুমিল্লা-৮ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আর কুমিল্লা-৩ ও কুমিল্লা-৪ আসনের দুই প্রার্থী পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে।
’১৪ সালের মতো এবারও চারটি আসনে জাতীয় পার্টির চাহিদায় বেঁকে বসেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা। আসন চারটিতে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান দিয়ে তারা বলছেন, এ আসনগুলোতে জাতীয় পার্টির অবস্থান এখন আর আগের মতো নেই; তাই তাদেরকে ছাড় দেয়া অযৌক্তিক।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি, পুরো কুমিল্লা জেলাতেই তাদের সাংগঠনিক শক্তি আগের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের তৎপরতা বেড়েছে, বেড়েছে জনসমর্থনও। ফলে আগামী নির্বাচনে শুধু জোটগত হয়েই নয়, এককভাবে অংশ নিলেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কুমিল্লা-৮ বরুড়া আসনের এমপি নুরুল ইসলাম মিলন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। বেড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। এছাড়া আমাদের ‘ক্লিন ইমেজের’ কারণে জনগণও সাথে আছে।’
তার দাবি, জোটগতভাবে যে চারটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, এর সবগুলোতেই দলটির অবস্থান বেশ ভালো। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। ‘ যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়- তাহলে এককভাবে নির্বাচনে গেলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন-’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, গতবারের (২০১৪ সাল) প্রেক্ষাপট আর এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে প্রেক্ষিতে বরুড়ার সিট (আসন) জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির যাকে সহযোগিতা করে নির্বাচিত করেছি, এবার এলাকায় উনার ঐ ধরনের অবস্থান নেই, তার দল জাতীয় পার্টিরও অবস্থান নেই।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ নেতার দাবি, গত ৫ বছরে জাতীয় পার্টির এমপির জনসম্পৃক্ততাহীনতার কারণে জনগণ এবার আওয়ামী লীগের কাউকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়।
একই অবস্থা কুমিল্লা- হোমনা তিতাস আসনেও। জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি আমির হোসেন এলাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের। প্রশ্ন তুলেছেন তার জনসম্পৃক্ততা নিয়েও।
এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলটির কুমিল্লা উত্তর জেলা শাখার সহ সভাপতি সেলিমা আহমেদ মেরী বলেন, এ সরকারের আমলে দেশের সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও বঞ্চিত হয়েছেন হোমনা তিতাসের মানুষ। এখানকার বর্তমান এমপি তাদের জন্য কিছুই করেননি। তাই তারা পরিবর্তন চায়।
তার দাবি, জনগণের কথা ভেবেই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া অযৌক্তিক।
তবে এমপি আমির হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। গেলো পাঁচ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে পরিবর্তন ডটকমকে তিনি বলেন, এমপি হওয়ার পর থেকেই দুটি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। কিছু কাজ চলমান; কিছু বাকি আছে। অসমাপ্ত উন্নয়ন কর্মকা- সমাপ্ত করতে এ আসনের জনগণ আমাকেই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়।
তিনি বলেন, গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি এমপি হয়েছি। এবার জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়েই সংসদে যেতে চাই। আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো, জনসমর্থনও আছে।
মহাজোটের প্রার্থীতা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব তুঙ্গে রয়েছে কুমিল্লা-৩ ও কুমিল্লা-৪ আসনেও। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতাদের যুক্তি- গতবার জোটের সমর্থনে নির্বাচন করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে দুটি আসনেই হেরেছেন তারা। এবার তো তাদের অবস্থান আরো খারাপ। সুতরাং জোটগতভাবে তাদেরকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
সূত্রমতে, দেবীদ্বার আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাচ্ছেন গতবারের প্রার্থী অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু। আর মুরাদনর আসন থেকে আক্তার হোসেন।
গত নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের কাছে। আর দেবীদ্বার আসনে ইকবাল হোসেন রাজুকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
এদিকে সংসদ নির্বাচনকে রেখে কুমিল্লার মর্যাদাসম্পন্ন কুমিল্লার চারটি আসনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে জোটগত কলহ তৈরি হয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে মহাজোটের প্রধান দুই শরীক দলের আন্ত:কোন্দলের বিষয়টি চিন্তিত করে তুলেছে দু’দলের সমর্থকদের। এছাড়াও সাধারণ ভোটারদের মাঝেও এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এখন অপেক্ষা জোটগত সিদ্ধান্তের।
সূত্রঃ পরিবর্তন