কুমিল্লায় ফুল চাষীদের লক্ষ্য ফেব্রুয়ারীর ৩ দিবস
মারুফ আহমেদঃ ফুল বিধাতার অন্যতম একটি সৃষ্টি। জগতে এমন লোক নেই যে ফুল ভালোবাসেনা। দু’টি মন জোড়া লাগাতেও উপলক্ষ থাকে ফুল। তাই যুগে যুগে সারা পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে মাধ্যম হিসেবে ফুল ছিল অপ্রতিদ্বন্ধি। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছেও ফুলের সমাদর অনেক অনেক বেশী। দিন যত এগুচ্ছে দেশজুড়ে ফুলের চাহিদাও বাড়ছে। আর এই চাহিদা মেটাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়ছে ফুল চাষ। এরফলে একদিকে ফুল প্রেমীদের চাহিদা বা মানুষের কাছে যেমন সহজলভ্য হচ্ছে ফুল,তেমনি ফুল চাষে জড়িত হয়ে অনেক মানুষ স্বাভলম্বি হচ্ছে। পুরো বছর নানা সামাজিক,ধর্মীয় , বিনোদন,সভা-সমাবেশ’এ অতিথিদের বরণ ইত্যাদি নানা কাজে ফুলের ব্যবহার থাকলেও ইংরেজী “ফেব্রুয়ারী”র তিনটি বিশেষ দিনকে উপলক্ষ্য করে সারাদেশে ফুল প্রেমীরা অন্যরকম এক উন্মাদনায় মেতে উঠে। বাদ যায়নি ফুল চাষীরাও। আর তাই এই মাসের তিনটি বিশেষ দিন বাড়তি কিছু আয়ের স্বপ্ন দেখে ফুল চাষীরা। ফলে চলছে ফেব্রুয়ারীর আসন্ন বিশেষ তিনটি দিনকে উপলক্ষ করে ফুল চাষীদের বাড়তি তদারকি।
ভ্যালেন্টাইন বা ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে সারা পৃথিবীতে অনুভূতি সম্পন্ন প্রতিটি মানুষ তার প্রিয়তমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। দিন যতই যাচ্ছে আমাদের দেশেও সেই বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে,ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও অনেক ফুল আসে আমাদের দেশে। সারাদেশের ন্যায় এই কুমিল্লার কোন ব্যস্ততম জনপদ পাওয়া যাবেনা,যেখানে ফুল বিক্রির দোকানগুলোতে বিশেষ এই দিনে অতিরিক্ত ফুল বিক্রি হচ্ছেনা । এতেই বোঝা যায় বিশেষ এই ভালোবাসার দিনে সাধারন মানুষের কাছে ফুলের ব্যবহার কতটুকু। আর এর সবটুকু হৃদয়ের অনুভূতি ব্যক্তের ভাষা। ফলে বিশেষ ৩ দিন উপলক্ষ করে কুমিল্লায় যেমন দিন দিন ফুল বিক্রির দোকান বাড়ছে, তেমনি বাড়তি আয়ের আশায় অনেকেই শীত মৌসুমটিকে ফুল চাষের জন্য বেছে নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারী আমাদের প্রানের ভাষার মাস,ফেব্রুয়ারী আমাদের হৃদয়ের নিংড়ানো ভালোবাসার আকুতি,ফেব্রুয়ারী আমাদের ফাগুনের রঙ্গীন ফানুস। আর তাই প্রতিটি মানুষ যেমন বিশেষ দিনগুলোকে সামনে রেখে ফুল নিয়ে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে মরিয়া ,তেমনি ফুল বিক্রির দোকানীরা সেইসাথে ফুল চাষীরাও। ফলে প্রতিটি বাগানে ব্যস্তসময় পার করছে চাষীরা। এই চিত্র জেলার বিভিন্নস্থানে বেসরকারীভাবে গড়ে উঠা নার্সারীতে দেখা গেছে। কেউ কেউ শখের বশে করা বাগানের ফুল দিয়েও প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের ক্ষনিকের চাহিদা মেটাতে উদগ্রীব। বসে নেই সরকারী পর্যায়ে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগীতা বা নির্দেশনায় সেখানকার চাষীদের ব্যস্ততাও। পাশাপাশি জেলার গুরুত্বপূর্ণ বা পদস্থ কর্মকর্তাদের সরকারী অফিস বা বাসভবনে গড়ে উঠা ফুল বাগানের যতœও বেড়ে গেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনায়। কেউ কেউ গোপনে সেইসব বাগানের ফুল প্রিয়তমা বা পছন্দের কাউকে দিলেও প্রানের ভাষার মাসে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ওই রাতের প্রথম প্রহর থেকে সকাল পর্যন্ত প্রতিটি জনপদেও শহীদ মিনারে এই ফুল নিয়েই শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন । আর এভাবেই ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখ পহেলা ফালগুণ, ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস, আর ভাষার দাবীতে শহীদ সালাম,রফিক,জব্বার,বরকতদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারী সারাদেশের মত এখানকার মানুষ শহীদ মিনারে খালি পায়ে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা,ভালোবাসা জানাবেন। বিশেষ এই তিনটি দিন পাশাপাশি হওয়ায় চাষীদের ব্যস্ততা পর্যবেক্ষণ একেক রকম।
ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে উঠা একাধিক নার্সারীর মালিক জানান, ভালোবাসা দিবসে অন্য যেকোন ফুলের তুলনায় গোলাপের চাহিদা থাকে বেশী। কেননা,এদিন পছন্দের মানুষকে একটি গোলাপ দিয়েই বরণ করতে চায় । কুমিল্লায় গোলাপ সেভাবে উৎপাদিত হয়না। আর পহেলা ফালগুণ ও ২১ ফেব্রুয়ারী এই দু’টি দিনে গোলাপের পাশাপাশি বেলী,গাদা, সহ বিভিন্নজাতের ফুল ব্যবহার হয়। সেক্ষেত্রে কুমিল্লার বিভিন্নস্থানে উৎপাদিত গাদাসহ বিভিন্ন প্রকারের ফুল কিছুটা হলেও চাহিদা মেটায়। কুমিল্লা শাসনগাছা হর্টিকালচার সেন্টারে রয়েছে অনেক ফুলের গাছ। প্রতিদিনই অনেকেই এসে টবে থাকা ফুলসহ গাছ কিনে নিচ্ছে। আর এসকল ফুলের অধিকাংশই বিশেষ দিনগুলোকে সামনে রেখে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কেনা। কুমিল্লা সদর উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সৈয়দপুর এলাকায় সৈয়দপুর বিএডিসি কৃষি উদ্যানে এবার বেশ কিছু ফুলের গাছ উৎপাদিত হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন শ্রেনীর হাজার হাজার ফুল চাষীদের যতেœ নিবিড় পরিচর্যা হচ্ছে। কথা হয় উপ-সহকারী পরিচালক দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান,এবার এখানে কমপক্ষে বিশ হাজারের মতো ফুলের চারা উৎপাদিত হয়েছে। বেশ কিছু ফুলগাছ বিক্রি হয়ে গেছে। তবে আসন্ন ভ্যালেন্টাইন ডে,১ ফালগুণ ও ২১ ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে এখানকার ফুলগাছগুলো যতœ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ দিনগুলোতে এখানকার উৎপাদিত ফুলগুলো বিক্রির কথা তিনি জানান। তিনি আরো বলেন,এখানে রয়েছে কমপক্ষে ১০/১২ জাতের ফুল গাছ। এখানে উৎপাদিত প্রতিটি গোলাপ ৫ টাকা, গাঁদা ফুলসহ গাছ ২০ টাকা, বারবিনা ২০ টাকা. চন্দ্রমল্লিকা ২০/২৫ টাকা, পিটুনিয়া ২০/২৫ টাকা,সাইলোসিয়া ২০ টাকা,গ্লাইডিওলাস ৭ টাকা,রঙ্গন ২০ টাকা,ক্যালেন্ডুলা ১০ টাকা,ডায়ান থায়াস ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লায় শুধু সরকারীভাবে নয় বেসরকারীভাবেও ফুল চাষ চচ্ছে ব্যপকহারে। উল্লেখযোগ্য কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, দেবিদ্বার, বরুড়া, হোমনা, তিতাস উপজেলা এলাকায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে পরছে। বুড়িচংয়ের ফুল চাষী মাহবুব আলম জানান, ফেব্রুয়ারীর বিষেশ দিন গুলোতে আমরা অনেক বেশী ফুল বিক্রী করতে পারব আশা করছি। আর এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফুলের চাষ খুব ভাল হয়েছে, ভাল লাভের আশংকাও করেন তিনি। কুমিল্লার গোমতীর চর আড়াইওরা রেল ব্রীজ সংলগ্ন গোমতী নার্সারীর মালিক জহিরুল ইসলাম জানান গত ৮বছর ধরে আমি নার্সারী ব্যবসা করছি, আমার নার্সারীতে ফুল এবং ফল গাছের চারা বিক্রি করি তার মধ্যে এ বছর প্রচুর পরিমানে ফুলের চারা বিক্রি করেছি। শুধু ফুল চাষীরা নয় সৌন্দর্য বর্ধনে বাসা বাড়িতে, অফিস-আদালতেও সৌখিন মানুষ এখন টবে করে ফুলের গাছ লাগাচ্ছে, আর তাতেই আমাদের ব্যবসায়ীদের সফলতা। ফুল চাষীদের ব্যস্ততাও অনেক বেশী, এ বছর ব্যবসা অনেক ভাল হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিঃ উপ-পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, কুমিল্লাতে বেসরকারীভাবে ১০ হেক্টোর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারীর বিশেষ দিনগুলোতে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা ভাল লাভবান হবে বলে আশা করছি।