ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নে অবস্থিত নিমসার বাজার। দেশের সর্ববৃহৎ সবজি বাজারের মধ্যে অন্যতম এটি। প্রতিদিন ফজরের আজান শুরু হওয়ার প্রায় ১ ঘন্টা পূর্বে এই বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়। চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এমন কোন জেলা নেই যে জেলার সবজি এখানে আসেনা সংশ্লিষ্ট এলাকায় যায় না।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০-১২ কোটি টাকার উপরে সবজি ক্রয় বিক্রয় হয় এই বাজারে। কুমিল্লা সহ আশেপাশের জেলার হাজার হাজার কৃষক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সহ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান এ বাজারটি। ঐহ্যিবাহী এ বাজারটি ইজারা নিয়ে ও খাঁজনা আদায়ে অরাজকতা সহ নানা কারনে হুমকির মুখে পরেছে। সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায়ের রশিদ বা সাইনবোর্ড না থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই বাজারে অনিয়ম ও জুলুম চলছে বলে অভিযোগ বাজারের ব্যবসায়ীদের।
১৯ ফেব্রুয়ারী চলতি বাংলা ১৪২৬ সালের ইজারা হয় বাজারটির। আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যে ইজারা নেন। গত বছরও বাজারটি ইজারা নিয়েছিলেন এই মামুন। ইজারাদার মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যবসায়ীদের নানাবিধ অভিযোগ। খোঁজ নিতে গেলে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের আকাবপুর গ্রামের এই মামুন এবং তাঁর পরিবার সম্পর্কে বেড়িয়ে আসে ভয়ংকর সব তথ্য।
সরেজমিন স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আগে মামুনের পরিবারের লোকজন হেরোইন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও হালে এখন কুমিল্লার অলিখিত "মাফিয়া ডন" ইয়াবা ডিলার। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের আকাবপুর গ্রাম। এই গ্রামের আব্দুল মান্নান। সংসারে রয়েছে ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, মিজানুর রহমান, মানিক মিয়া ও মাসুম আর কন্যা হাসু, নাছিমা, স্বপ্না, রত্না ও সুমী। অভাবের সংসারে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়নি দরিদ্র পিতার। ফলে স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি ছোট ছেলে মাসুম ছাড়া অন্য কেউ।
আরো পড়ুনঃ কুমিল্লার "মাফিয়া ডন" মামুন, ইয়াবা যার পারিবারিক ব্যবসা
দায়িত্বশীল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, বর্তমানে জেলার অন্যতম মাফিয়া ডন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মিজানুর রহমান দু’জনেই রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধির লেবাসধারী। মিজান ময়নামতি ইউনিয়নের বর্তমানে নির্বাচিত ইউপি সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুত্র জানায়, ২০০৮ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের হাতে মামুন হেরোইনসহ হেরোইন মাপার নিক্তি-পাল্লাসহ আটক হয়েছিল। ২০১৮ সালে ইয়াবা সহ ঢাকায় আটক হয় মামুন, তার চালক ও রেহানা নামের এক নারী। ঠাই হয় কাশিমপুর কারাগারে। কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে আসে মামুন।
২০১৮ সালের ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওয়াজেদিয়া মোড় এলাকা থেকে ট্রাকসহ চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৬৩ হাজার পিছ ইয়াবাসহ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মামুনের ভাই মিজানুর রহমান, গাড়ি চালক বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই এলাকার আবুল বাশার ও সহযোগী বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা (উত্তর) ইউনিয়নের পশ্চিম সিং গ্রামের জসিম নামের ৩ জনকে আটক করে। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বান্দরবান থেকে তারা কুমিল্লার নিমসার বাজার এলাকায় এই ইয়াবার চালান নিয়ে যাচ্ছিল। আর সেখান থেকে তরকারী বোঝাই ট্রাক,কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহনে করে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজারে। চট্টগ্রামে আটক ইয়াবার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আরো পড়ুনঃ কুমিল্লার ইয়াবা ডন মিজান চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার, পড়ুন কে এই মিজান?
সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো জানায়, বর্তমানে মামুন-মিজানগংরা নিজেদের মাদক ব্যবসা নিরাপদ রাখতে দেশের অন্যতম বৃহৎ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নিমসার কাচাঁমালের বাজারটি ২০১৮ সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকায় এবং ২০১৯ সালে প্রায় ৩ কোটি টাকায় ইজারা নেয়।
দায়িত্বশীল সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিদিন তরকারীর বড় বড় ঝুঁড়ির ভিতর থাকা মিষ্টি কুমড়ো, লাউ, চালকুমড়া ছাড়াও অন্যান্য তরকারীর ঝুঁড়িতে করে প্রতিদিন নিমসার বাজার থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ পাচাঁর করছে লাখ লাখ পিছ ইয়াবা।
সূত্র আরো জানায়, নিমসার বাজার থেকে ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে করে পাচাঁর হওয়া মাদক সর্বশেষ ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রবেশের পর রাতের আধাঁরে সেখান থেকে মাদক সিন্ডিকেটের লোকজন তাদের পছন্দের লোকজন দিয়ে নির্ধারিত গন্তেব্যে নিয়ে যান ইয়াবা।
সম্প্রতি কুমিল্লার বৃহত্তম নিমসার সবজি বাজারের টোল আদায় নিয়ে ব্যবসায়ী ও বাজার ইজারাদার মামুনের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয় ৩ জন। পরে বাজারের ব্যাবসায়ী শ্রমিক সহ এলাকার সহশ্রাধিক লোক একত্রিত হয়ে নিমসার বাজার রক্ষা ও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মহাসড়কে মানববন্ধণ, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
নিমসার বাজার কমিটির সেক্রেটারি মোকাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, দেশের শীর্ষ ইয়াবা ও মাদক কারবারি মামুন সে এই বাজারের ব্যাবসায়ি বা এলাকার নয়। বাজারের খাজনা আদায়ের অন্তরালে ইয়াবা কারবার করতেই তিন চার গুন বেশী টাকায় বাজার ইজারা নিয়ে কৃষক ও ব্যাবসায়ীদের ওপর জোর জুলুম করে বাজার ধ্বংশের পায়তারা করছে।
মোকাম যুবলীগের সভাপতি বাজারের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও সিটি ব্যাংক নিমসার এজেন্ট শাখার চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, বহিরাগত চিহ্নিত শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ী মামুন বাহিনী লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি ধ্বংশের পায়তারা করছে। অধিক টাকায় ইজারা এনে মাদক ব্যাবসার কালো টাকা সাদা করতে প্রতিনয়ত মাদকের বড় বড় চালান এনে এলাকার যুব সমাজকে নষ্ট করছে।
বাজারের আড়ৎ ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাবেক মেম্বার হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারটি বহু লোকের কর্মসংস্থান। একটি মাদক ব্যাবসায়ী ও বহিরাগত সন্ত্রাসী চক্র বিগত দুবছর ধরে বাজারে নানা অনিয়ম ও লুটপাট চালিয়ে বাজারটি ধ্বংসের পায়তারা করছে। এসব অনিয়ম ও অত্যাচার নিয়ে মাননীয় ডিসি মহোদয় সহ ইউ এন ও মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com