নাঙ্গলকোটে বোরো ধানের কৃষকদের মাথায় হাত

মো. ওমর ফারুকঃ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বোরো ধানের কৃষকদের মাথায় হাত। তাদের মুখে হাসি নেই । ধান উৎপাদনের খরচের চেয়ে বাজার মূল্য অনেক কম হওয়ায় এখন তারা হতাশায় ভূগছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কৃষকদের মাঠের ধান কাটা এখন প্রায় শেষ পর্যায়। তারা বাড়ির আঙ্গিনায় মজুদ রাখা ধান শ্রমিক দিয়ে উপযোগী করে ঘরে তুলছেন । অনেকে বস্তা ভরে ধান বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারে গিয়ে দেখেন ধানের মূল্য অনেক কম। নিরুপায় হয়ে আবার ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। কৃষকদের জানান, দ্রুত ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হক।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি ধান বাজারের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কাছে তারা জিম্মি হয়ে আছে। উপজেলার কাদবা গ্রামের কৃষক শাহাজাহান, জহিরুল হক, মাঈন উদ্দিন বলেন, একজন বদলার দাম ৬শ টাকা। কিন্তু ১মণ ধানের মূল্য ৫শ টাকা থেকে ৫শ ৫০টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের বোরো আবাদ চাষে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয় প্রায় ২১মণ। কিন্তু এক বিঘায় ধান উৎপাদনে বীজ ক্রয়, বীজ তলা তৈরী, জমি চাষ, ধানের চারা লাগানো, বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ, আগাছা বাছাই, কীটনাশক রোগ বালাই খরচ, পানি সেচ, ধান কর্তন, ধান মাড়াই, ঝাড়াইসহ সর্বমোট খরচ ১৮হাজার ৫শ টাকা। প্রতি মণ ধানের মূল্য হচ্ছে ৫শ ৫০টাকা। সে হিসেবে এক বিঘায় ২১ মণ ধানের মূল্য হচ্ছে ১১হাজার ৫শ ৫০টাকা। প্রতি বিঘায় কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭হাজার টাকা। কিন্তু সরকার প্রতি কেজি ধানের মূল্য দিচ্ছে ২৬টাকা। এতে করে প্রতি মণ ধানের মূল্য হচ্ছে ১হাজার ৪০টাকা। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে পারছেনা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র দাস জানান, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এবার ১২ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলায় সরকারিভাবে ৪শত ৩মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিকট হতে চাহিদা নেয়া হচ্ছে। উপজেলা খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ভাবে ধান ক্রয় বন্ধ রয়েছে। সরকার নির্দেশনা দিলে আমরা ধান ক্রয় করবো।

নাঙ্গলকোট উপজেলা খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে আমাদেরকে তালিকা দেয়া হলে, তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ধান ক্রয় করা শুরু হবে।

শনিবার উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার বোরো ধানের ফলন লক্ষ্য মাত্রা চেয়ে গেছে। আমরা ইউনিয়ন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের নিকট থেকে ধান বিক্রির চাহিদা নিচ্ছি। যেসব কৃষক ধান বিক্রি করতে আগ্রহী তারা তালিকা প্রদান করলে, আমরা ওই তালিকা খাদ্য গুদামে পাঠিয়ে দেব।

আরো পড়ুন