ষাটে পা দিলো কুমিল্লা বার্ড
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ৬০ বছর পূর্ণ করেছে। পল্লী উন্নয়ন, সমবায় আন্দোলন ও গবেষণার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। পল্লী উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কারও দিয়েছে। প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এই নৈসর্গিক, মনোলোভা, টিলাঘেরা ও গাছগাছালির অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ক্যাম্পাস দেখতে আসেন। কেউ কেউ রাতও যাপন করেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে সমাজবিজ্ঞানী আখতার হামিদ খান বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পাহাড় ও টিলাঘেরা কোটবাড়ি এলাকার ১৫৬ একর জমির ওপর বার্ড প্রতিষ্ঠা হয়। ময়নামতি পাহাড়ের অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্যকে অটুট রেখে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে ও গ্রিক স্থাপত্যের আদলে ডাক্স অ্যাডিস ফামের নকশায় তৈরি হয় এখানকার ভবনগুলো। এখানকার এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যেতে কোনো রোদ লাগবে না। বৃষ্টিও পড়বে না। পুরো ক্যাম্পাসের স্থাপনাই সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। ভবনগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে নানা দুর্লভ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বার্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পল্লি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বার্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্রে ৬০ বছর ধরে তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা বিবেচনায় রেখে তথ্যপ্রযুক্তির সফল প্রয়োগে বাংলাদেশে পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি আরও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বার্ড সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বার্ড উদ্ভাবিত পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন করছে। খ্যাতনামা এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রশাসনিক জনবল রয়েছে ৪০০ জন। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৮৫০টি গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ে পল্লি উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে চার লাখের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বার্ডে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খানের নামেই নামকরণ করা হয়েছে বার্ড গ্রন্থাগারের। সেখানে বর্তমানে দেশি-বিদেশি অনেক দুর্লভ গ্রন্থসহ প্রায় ৭০ হাজার গ্রন্থ রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ক্যাম্পাসের ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ। পুরো এলাকায় শান্ত পরিবেশ । নিরিবিলি কাজ হচ্ছে।
বার্ডের সহকারী পরিচালক সালেহ আহমেদ বলেন, এখন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বিসিএসে উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের বনিয়াদি প্রশিক্ষণ চলছে।
বার্ড প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনা করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথা বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে দ্রুত পরিবর্তনের জন্য বার্ড আরও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বলে জানা গেছে। আখতার হামিদ খানের সৃজনশীল ও দূরদৃষ্টির ফসল ‘কুমিল্লা মডেল’ যা দেশের পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে মৌলিক ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের সূচনার মধ্য দিয়ে বার্ডের পরীক্ষিত কর্মকাণ্ড ষাট ও সত্তরের দশকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
কুমিল্লা অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক কাজী আবুল বাশার বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে মানুষকে পুঁজিপতি বানানো ও পল্লি উন্নয়নে বার্ডের ভূমিকা এ দেশে অগ্রগণ্য।
বার্ডের পরিচালক (প্রশাসন) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রমজানের কারণে এবার মিলাদের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়।
বার্ডের মহাপরিচালক (ডিজি) এম মিজানুর রহমান বলেন, পল্লী উন্নয়নে বার্ড অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। বর্তমানে বার্ডে সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ও সাইনবোর্ড, বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে। সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় লালমাই পাহাড়ের পাদদেশের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের মুরগি, মৌমাছি চাষ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বার্ডকে প্রশিক্ষণ কমিয়ে এখন গবেষণার দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। বার্ডে এখন গ্রামভিত্তিক কৃষি গবেষণা কম হচ্ছে। এটা বাড়াতে হবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বার্ডকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দিতে হবে। বার্ডের জন্য একটি ফুলটাইম বোর্ড হওয়া দরকার ।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সময়ে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বার্ড ভূমিকা রাখে। তখন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ডের সঙ্গে কাজ করত। এখানকার উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করত। এখন সেটি দেখা যায় না। বার্ডের গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি দিয়ে সেচ কাজ, কৃষি বিপ্লব, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি সম্প্রসারণ, সমবায় আন্দোলন, সমিতি করা, কৃষি ঋণ, পরিবার পরিকল্পনা সবই আখতার হামিদ খানের সৃষ্টি।
সূত্রঃ প্রথম আলো