কুমিল্লা জেলার সংসদীয় আসন সংখ্যা হতে পারে ১২ টি !
ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ সংসদীয় আসনের ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যার ভারসাম্য প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগোলিক অখন্ডতার বিষয়টি বিবেচনায় না এনে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই প্রায় ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ (সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোট) আসন সীমানা নির্ধারন সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ঐ গেজেটকে সর্ম্পূন অযোক্তিক ও বেআইনী চ্যালেঞ্জ করে একই সালে একটি রীট মামলা দায়ের করেন নাঙ্গলকোট আসনের সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া। মামলায় বিবাদী করা হয় নির্বাচন কমিশনকে। ঐ মামলার রায়ে সীমানা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতীত করা হয়েছে বিধায় এর কোন আইনগত কার্যকারীতা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে আলাদা সংসদীয় আসন চেয়ে দায়ের করা রীট আবেদনের রায়ে নির্বাচনী অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর বিধি-বিধান অনুযায়ী পৃথক সংসদীয় আসন করার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুসারে আদেশ মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে কুমিল্লা-৯ (সদর দক্ষিণ ) এবং কুমিল্লা -১১ (নাঙ্গলকোট) পৃথক আসনের পক্ষে পর্যবেক্ষন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ আদেশের খবর জানাজানি হলে নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ উপজেলা এলাকার সকল মহলে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। এ দিকে এ রীট মামলা আদেশের ফলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক কুমিল্লা-৯ (সদর দক্ষিণ) এবং সাবেক কুমিল্লা-১১(নাঙ্গলকোট) আসন পূর্নবহাল হলে জেলায় সংসদীয় আসনের সংখ্যা হবে ১২ টি এবং এতে জনগনের দূর্ভোগেরও অবসান ঘটবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় জনসংখ্যার আলোকে নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসন পূর্নগঠন করে। ঐ সময় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কিছু অংশ ও লাকসামের কিছু অংশ নিয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা গঠিত হয় এবং কুমিল্লা সদর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও লাকসামের ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা-৯ ( সদর দক্ষিণ) সংসদীয় আসন গঠন করা হয়। ২০০৩ সালে তৎকালীন এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে সদর দক্ষিণ পৌরসভা ও ২০০৪ সালে সদর দক্ষিণ উপজেলা গঠিত হয়। ১/১১ সরকারের সময় জেলার কিছু আসনকে অযৌক্তিক ও নিয়ম বহিভূতভাবে কোথাও দুই ভাগে, আবার কোথাও ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। কুমিল্লা-৯ (সদর দক্ষিণ) প্রথমে ২ ভাগ ও পরে ৩ ভাগ করা হয়। ২০০৮ সালে আসন সীমানা পূর্নবিন্যাসের সময় জেলার ১২ টি আসনের মধ্যে কুমিল্লা-৯ (সদর দক্ষিণ) আসনটি একবোরে বিলুপ্ত করে দিয়ে ১১ টি আসন করা হয় এবং সদর দক্ষিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকাকে পার্শ্ববর্তী ৩ টি আসনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছিলো। ফলে ঐ উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদেরকে নিজেদের প্রয়োজনে বা এলাকার উন্নয়নে ৩ জন এমপির পিছু দৌড়াতে গিয়ে সীমাহীন হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। এতে সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর নের্তৃত্বে সদর দক্ষিণ উপজেলা ঐক্য সংহতি পরিষদের ব্যানারে দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পুনরায় সদর দক্ষিণ উপজেলার ৩টি অংশ একত্রিত করা হয়। এরপর ২০১১ সালে ৩৫ কিলোমিটার আয়তনের ‘এ“ শ্রেনীর সদর দক্ষিণ পৌরসভার সাথে ১৭ কিলোমিটার আয়তনের দেড়শ বছরের পুরোনো কুমিল্লা পৌরসভার সমন্বয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। ২০১৩ সালে সংসদীয় আসন সীমানা পূর্ননির্ধারনের সময় এ আসনে ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যার তারতাম্য, প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগলিক অখন্ডতার বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি। ঐ সময় আবারো দীর্ঘদিনের পৃথক ২ টি সংসদীয় আসন এলাকাকে একত্রিত করে কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ) ও (নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসন করা হয়। তাই এ আসনের সীমানা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এবং এ দুটি উপজেলার জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০৮ সালে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও নাঙ্গলকোট উপজেলা দুটি ভিন্ন সংসদীয় আসন ছিলো। ১৯৮৬,১৯৮৮,১৯৯১,১৯৯৬,ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত মোট ৫ সংসদীয় নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ এর সংসদীয় এলাকা ছিলো কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলা এবং কুমিল্লা ১১ সংসদীয় এলাকা ছিলো নাঙ্গলকোট উপজেলা। সূত্র আরো জানায়, এবার ইসি আগে এসব আসনের সীমানা পর্যালোচনা করার পর চূড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহন করবে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে এবার কুমিল্লায় আসন সংখ্যা ১২টিতে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নাঙ্গলকোটকে পূর্নরায় আলাদা আসন দিয়ে সদর দক্ষিণ ও নব গঠিত লালমাই উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন হতে পারে। সংসদীয় আসন বিন্যাস বিষয়ে প্রবীন রাজনৈতিক ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে এ আসনের (কুমিল্লা-১০) সীমানা কুমিল্লা মহানগরের কেন্দ্রস্থল টমছমব্রীজ থেকে ফেনীর দাগনভূঁইয়া সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এর ফলে এ আসনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার এবং ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ও জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। এমন আসন আরেকটি বাংলাদেশের কোথাও নেই। যা নির্বাচনী অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর বিধি বিধানের ব্যপক লংঘন। বিগত সময়ে প্রতি সাধারন নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিলেও বাস্তবতার নিরীখে ১৯৮৩ সালের আসন সীমানা পূর্নবিন্যাসের কোনো বিকল্প খুজেঁ পাওয়া যাবেনা বলে তিনি দাবি করেন।
আলাদা সংসদীয় আসনের বিষয়ে সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারন অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ধারা ৬(২) এর বিধান লংঘন করে অযোক্তিকভাবে কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোট) আসনের সীমানা নির্ধারন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় যা সম্পূর্ণ বেআইনী ও অগ্রহনযোগ্য। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্জ চলতি বছরের ২০ মার্চ ঐ রীট মামলার রায় ঘোষনা করেন। মামলার বাদী পক্ষের অ্যাডভোকেট রাজু উদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৩ সালের ৩ জুলাই এর বিতর্কিত গেজেট প্রজ্ঞাপন ২৫৮ সংসদীয় আসনের (নাঙ্গলকোট) সীমানা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতীত করা হয়েছে বিধায় এর কোন আইনগত কর্যকারীতা নেই বলে মামলার রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুসারে আদেশ মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।