দাউদকান্দিতে পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই মাদকের হাট
ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার প্রাচীনতম গৌরীপুর বাজারের ঐতিহ্য এখন অনেকটাই ম্লান হওয়ার পথে। মোগল আমলের প্রসিদ্ধ এ বাজারটি এক সময় আশপাশের কয়েকটি উপজেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিখ্যাত পাইকারী বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীদের কালো থাবায় এ বাজারের ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে। এ বাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও এর সামনেই বসে রমরমা মাদকের হাট। দিন শেষে সন্ধ্যা নামলেই বাজারের অলিগলিতে শতাধিক মাদক সম্রাটের তত্ত্বাবধানে চলে মাদকের খুচরা ও পাইকারী হাট। জেলা গোয়েন্দা শাখার টহল এবং বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী আটকের পর বেরিয়ে আসে মাদক ব্যবসার এমন ভয়াবহ চিত্র। এসব ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী এবং সরকারদলীয় বেশ কিছু নেতাকর্মী। এদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে এ ব্যবসা চলায় সাধারণ ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা তাদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না। সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে শতাধিক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীর তত্ত্বাবধানে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শত শত উঠতি বয়সের তরুণ যুবক এবং বিভিন্ন বয়সের মাদকসেবীরা ভিড় জমায়। বাজারের অলিগলিতে হাত বাড়ালেই মিলে ইয়াবা-ফেনসিডিলসহ যে কোনো মাদক। দরকষাকষির মাধ্যমে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন ধরনের মাদক ক্রয় করা যায় এ হাট থেকে। এ বাজারের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক প্রভাবশালী গ্রুপ। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকেই তারা চালিয়ে যাচ্ছে এ ভয়াবহ ব্যবসা। সড়ক ও নদী পথে আসছে বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান। সম্প্রতি মাদক ব্যবসা ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে ওই এলাকায়। গৌরীপুর বাজারের অধিকাংশ অপরাধ এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং গোয়েন্দা শাখার একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। ব্যবসায়ীরা জানায়, ইতিপূর্বে জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম এবং এসআই শহীদুল ইসলাম পিপিএমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গৌরীপুর বাজারে মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আটক করতে নানামুখী তৎপরতা চালায়। ডিবি পুলিশের তৎপরতার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে। বুধবার রাতে পাইকারী মাদক বিক্রেতা আবদুল মান্নানকে গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির গেট থেকে আটকের পর ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানায়, তার মতো আরও বেশ কিছু ব্যবসায়ী গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বসে ব্যবসা পরিচালনা করে। তবে রহস্যজনক কারণে পুলিশ এসব মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে না। এ বিষয়ে গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ফাঁড়ির সামনে ব্যবসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আটক করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি একেএম মনজুর আলম জানান, গৌরীপুর বাজারে ইতিপূর্বে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, গৌরীপুর বাজারকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সূত্রঃ যুগান্তর