ময়নামতিতে কপি চারা উৎপাদন করে স্বনির্ভর শতাধিক পরিবার

মো.জাকির হোসেনঃ কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী জনপদ ময়নামতির সমেষপুর গ্রামের শতাধিক পরিবার উচ্চফলনশীল আগাম কপিচারা বিক্রি করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। এখানকার প্রায় ৪০ একর জমিতে এইসব কৃষি পরিবারের লোকজন প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ কোটির বেশী চারা উৎপাদন করছে। আর এ থেকে আয় করছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাষীরা ক্রয় করছে এই কপিচারা।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির সমেষপুর গ্রামে বিগত শতকের ৮০’র দশকের শুরুতে আগাম জাতের ফুল ও বাঁধা কপি’র চারা উৎপাদন শুরু হয়। এরপর এক সময় পুরো গ্রামজুড়ে এর উৎপাদন ছড়িয়ে পড়ে। জুলাইর শেষ দিকে জমি তৈরীর কাজ শুরু করেন এখানকার কৃষকরা।
এরপর আগষ্টে জমজমাট হয়ে উঠে সমেষপুর গ্রাম। ফজরের নামায শেষে এই গ্রামের প্রতিটি কৃষক পরিবারে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। সাধারনতঃ পরিবারের লোকজনই পুরোসময় ব্যয় করে। কখনো কখনো ব্যস্ততা বাড়লে দৈনিক মুজুরীতে শ্রমিক দিয়েও চারা পরিচর্যা করেন। কথা হয় কৃষক মোতাহের হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে আমি চারা ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি আরো বলেন, এখানকার চাষীরা সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা ছাড়াই চারা উৎপাদন ও বিক্রি করেন। চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেসরকারী বীজ কোম্পানীগুলো তাদের মাঠ পর্যায়ে এসে সহযোগীতার কথা জানান। মাঠে কথা হয় রংপুরের জামাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমি ৭/৮ বছর ধরে এখান থেকে আগাম জাতের কপি চারা ক্রয় করে নিচ্ছি। কথা হয় কৃষক মোক্তল হোসেন , যোহর আলী , কাসেম , নুরুল ইসলাম ,রমিজ উদ্দিন প্রমুখের সাথে। তারা বলেন, আমাদের এখানে পুরো গ্রামজুড়ে ফসলের মাঠে শুধুই ফুল ও বাঁধা কপি’র চারা। এজন্য আমরা আগষ্ট থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি চরম ব্যস্তসময় পার করি। তারা আরো বলেন, আমরা চারা উৎপাদনের জন্য ১২ হাত লম্বা ও আড়াই হাত প্রসস্থ করে জমি তৈরী করি। স্থানীয় ভাষায় এটাকে বিট বলে। বীজ রোপনের ৪ দিনেই চারা উঠতে শুরু করে ১২/১৪ দিনে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। প্রতি মাসে একটি বিট থেকে কমপক্ষে দু’বার চারা বিক্রি হয়। একটি বিটে প্রায় ৬ হাজার চারা উৎপাদন হয়। পুরো গ্রামজুড়ে এরকম হাজার হাজার বিট রয়েছে।
তাজুল ইসলাম নামের এক কৃষক জানান, চারা বিক্রির মৌসুমে খুব ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতেই আমাদের সময় কাটে। সারাদিনই চারাগুলোর যত্ন নিতে হয়। কখনো পানি কখনোবা মাটি নিড়ানো আবার রোদের তাপ থেকে চারা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যেতে কৃষকরা ছোট ছোট প্লট করে মাঝে ড্রেন করে রেখেছে। কৃষক মোতাহের হোসেন জানান, আমাদের এখানে শতাধিক পরিবার আগাম জাতের কপি চারা বিক্রি করেই স্বাভলম্বি। তিনি বলেন, প্রতি শত চারা ৭০ থেকে ১’শ ২০ টাকায় বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে প্রতি বছর আগাম জাতের ফুল ও বাঁধাি কপি’র প্রায় ১০ কোটি চারা বিক্রি হয়। সারাদেশের পাশাপাশি কুমিল্লার সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্নস্থান থেকেও অনেকে এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার উচ্চ ফলনশীল জাতের ফুল কপির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিলভার কাপ ৬৫, মাউন্টেন , টেসার , ৭৭৭ , সিরাজি , মিল্কো, ফ্রেস মাষ্টার প্রমূখ এবং বাঁধাকপি’র মাঝে কে কে , কে কে ক্রস , অটাম , ৭০ প্রমূখ। কৃষক মোতাহের হোসেন জানান, সারাদেশে ময়নামতির সমেষপুর গ্রাম কপি চারা বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ। তবে দুর্ভাগ্য কৃষি অফিস থেকে কখনো কেউ তাদের খোঁজ নিতে আসেনা।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীম হোসেন কৃষকদের সহযোগীতা না করার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আমি গত ৩ দিন আগেও সেখানে গিয়েছি। এবং নিয়মিত কৃষি অফিস থেকে তাদের কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছি।