কুমিল্লা বার্ড আপনাকে দিতে পারে অন্যরকম ভ্রমণ আনন্দ
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী কুমিল্লা বার্ড আপনাকে অন্যরকম স্বাদের একটা ভ্রমণ সুখ দেবে। কেননা এখানে রয়েছে গাছ-গাছালী শোভিত, পাখির কুজন আর ছায়া সুনিবিড় নিরাপদ এক ভ্রমণকেন্দ্র। আপনাকে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। বার্ড এর একাডেমীক ভবন হোস্টেল এর পেছনে রয়েছে বাগান। প্রায় সাড়ে তিনশ কর্মী নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান। পেছনে রয়েছে কর্মীদের আবাসস্থল। গাছে গাছে ফুল ফল আর খেলার বাগান, বাঁশঝাড় সবই দেয়াল ঘেরা একটা গ্রামের মতো এরিয়ার মধ্যেই। আরো আছে ছোট পাহাড়, দর্শনার্থীদের জন্য এখানে আছে ছোট ছোট বসার সিড়ি। আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। পিকনিক করার জন্য সব আয়োজন, আছে বিশ্রামের সু ব্যবস্থা।
আমরা অনেকেই ময়নামতি শালবন বিহার বেড়াতে গেলে বার্ড এ যাই। অনেকে আবার মনে করে সরকারী অফিস ভেতরে গিয়ে কি লাভ? অনেকে আবার সামনে থেকে ঘুরে চলে আসেন। ফলে পেছনের সৌন্দর্যটা আমাদের অজানা থেকে যায়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে পল্লী উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও প্রায়োগিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত একটি স্বায়ত্তশাসিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে বেশীরভাগ লোকজন আসেন যারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। আখতার হামিদ খান ১৯৫৯ সালে কুমিল্লা জেলার কোর্টবাড়িতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) প্রতিষ্ঠা করেন।
কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে বার্ড একটি পিকনিক স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র। এখোনে রয়েছে পিকনিক ও বিনোদনের সব ব্যবস্থা ভেতরে রয়েছে পাহাড় ও নানারকম গাছগাছালি। বাইরে থেকে বোঝাই যায়না ভেতরে একটি সুন্দর বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে। রয়েছে কয়েকটি টিলা। এখানকার নীলাচল পাহাড় আপনাকে বার বার টানবে ওখানে যাওয়ার জন্য। আছে বনমালঞ্চ নামে একটি সুন্দর ভিআপি পিকনিক স্পট। ভেতরে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো ও খেলাধুলার জন্য রয়েছে প্রচুর পরিমাণ জায়গা। মনে হবে এ একটা আনন্দরাজ্য।
কর্পোরেট জগতের জন্য বার্ড হলো একটি সুন্দর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে ৪০০টি সিট রয়েছে। একসাথে অনুষ্ঠান চলতে পারে কয়েকটি হলরুমে। আছে ক্লাসরুম ও ট্রেনিং সেন্টারের সব ব্যবস্থা। এখানে ২টি ভালো মানের ক্যাফটেরিয়া রয়েছে। যেখানে সুলভ মূল্যে পুষ্টিকর খাবার পাওয়া যায় সারাদিন। এছাড়া রয়েছে ৪ টি কনফারেন্স কক্ষ, ১ টি গ্রন্থাগার ও ১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বার্ড এর আরেকটি আকর্ষণ হলো এর পারিপাশ্বিক পরিবেশ। উচু নিচু পাহাড়ের গা ঘেষে নানাগাছগাছালির মাঝে। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার লোক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘুরে দেখতে আসে। বার্ডের পাশেই রয়েছে। কুমিল্লা ময়নামতি বৌদ্ধবিহার প্রাচীন প্রত্নতাত্তিক নির্দর্শন। যে কেউ বার্ডে থেকে চাইলে এগুলো ভ্রমণ ও গবেষণা করতে পারেন। রুপবানমূড়া, শ্বেতমন্দির, আনন্দবিহার এগুলো বার্ড এর আশেপাশেই।
প্রতিবছর সারাদেশ থেকে লাখো লাখো শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানীর এজিএমসহ নানা প্রশিক্ষণের জন্য এখানে আসে হাজার হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। প্রাকৃতিক রুপলাবণ্যভরা এই স্থানটি পুরো এলাকাসহ একবার ঘুরে আসুন। গমন করুন পরিবার পরিজনসহ।
মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বার্ড যাত্রা শুরু করলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ এবং তৃণমূল পর্যায়ের লোকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বার্ড ২,২০,৪১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দান করেছে। বর্তমানে গড়ে প্রতি বছর ১৫০-১৮০ টি প্রশিক্ষণ কোর্সে ৬,০০০ প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করে থাকে।
বার্ডে প্রবেশের জন্য কোনো টিকেট নেই। তবে রাতে থাকার জন্য প্রতি রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা। প্রতি রুমে ২টি করে বেড রয়েছে। আর হলরুমের ভাড়া ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত। এছাড়া ভিআইপি পিকনিক স্পট এর জন্য আলাদা ভাড়া দিতে হয়। মাঠে খেলাধুলা বা অন্য কিছু এমন কি ঘুরে দেখার জন্য কোনো পয়সা দিতে হয়না।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে কুমিল্লার বাসে যেতে হবে। আপনি নামতে পারেন ক্যান্টনমেন্ট মেইন গেটের সামনে অথবা কোর্টবাড়ী গেটের সামনে। সেনানিবাসের ভেতর দিয়ে বাসে ২০ টাকা অথবা কোটবাড়ী রোডের মাথা থেকে অটোতে ২০ টাকায় জনপ্রতি বার্ডের সামনে গিয়ে নামা যায়। গ্রুপ ভ্রমণ বা ট্রেনিং এর জন্য অবশ্যই আগে থেকে যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে যাবেন। ৫/৭ জনের মামলা হলে অর্ডার দেয়া ছাড়াই ক্যাফটেরিয়াতে খেতে পারবেন। এর বেশী হলে আগেই অর্ডার ও এডভান্স পেমেন্ট করতে হবে। মনে রাখবেন এখানে বুকিং দিতে হবে ৯টা থেকে ৫টার মধ্যে। অন্যসময়ে হলে কর্তাদের পাওয়া যাবেনা।
লেখকঃ জাহাঙ্গীর আলম শোভন