স্বর্ণসহ আটক বিমানকর্মী কুমিল্লার জামাই ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা কুমিল্লার জামাই ফারুকসহ  আরও এক যাত্রীকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

সূত্র জানায়, শনিবার ভোরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বিমান বাংলাদেশের গ্রাউন্ড সার্ভিস সুপারভাইজার (ট্রাফিক) মো. ওমর ফারুক, মালয়েশিয়া ফেরত যাত্রী কাজী কামরুল ইসলামকে প্রায় সোয়া কেজি স্বর্ণসহ আটক করে। আটক দুজনের বাড়িই কুমিল্লায়।

শনিবার ভোরে বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজ থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ১২টি স্বর্ণবারসহ তাদের আটক করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মাহাপরিচালক (ডিজি) মইনুল খান জানান, কামরুল ইসলাম গতকাল ভোররাতে কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ০৮৭ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বোর্ডিং ব্রিজের মধ্যেই বিমানকর্মী ওমর ফারুকের কাছে কালো স্কচটেপ মোড়ানো দুটি প্যাকেট তুলে দেন তিনি। এ সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করে শুল্ক গোয়েন্দারা। এর পর প্যাকেটগুলো খুলে প্রতিটি ১০০ গ্রাম ওজনের মোট ১২টি স্বর্ণবার জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬০ লাখ টাকা।

মইনুল খান আরও জানান, গ্রেপ্তার কামরুলের বাবার নাম মো. আব্দুল ওয়াব। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তুলাতলীর এলাহিপুরে। আর বিমানকর্মী ওমর ফারুকের বাবার নাম মৃত তমিজ উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি একই জেলার সৈয়দপুরের শরৎনগর। স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়ে আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কে এই জামাই ফারুক!

আটককৃত বিমানকর্মী মো. ওমর ফারুক কুমিল্লা আদর্শসদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিন এর ছেলে। বিমান বাংলাদেশের গ্রাউন্ড সার্ভিস সুপারভাইজার (ট্রাফিক) মো: ওমর ফারুক নিজ এলাকা ও ঢাকা এয়ারপোর্টে জামাই ফারুক হিসেবেই পরিচিত। আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেকান্দর আলীর বড় ভাই নুরুল ইসলাম এর মেয়ের জামাতা ওমর ফারুক। চেয়ারম্যানের ভাতিজি জামাই হওয়ায় সর্বত্রই তার পরিচিতি জামাই ফারুক।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষায় জানা যায় দেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলার। সে হিসেবে প্রতিদিনই বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর যাত্রী বেশি থাকে বিমানে। তাই এয়ারপোর্টের কার পার্কিং এ থাকা রেন্ট এ কার নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে জামাই ফারুকের আধিপত্য।

এছাড়া বিমানে স্বর্ণ ও ইয়াবা পাচারে কতিপয় বিমানকর্মীর যোগসাজশ পাওয়ার খবর রয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। জানা যায়, বিমানের অসাধু কিছু কর্মী চোরাচালানের নিরাপদ পাসিংয়ে সহায়তা করে। সিন্ডিকেট প্রতি হাজার ইয়াবার পাচারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দেয় প্রায় ৫০হাজার টাকা। প্রতি চালানে প্রায় ৫হাজার ইয়াবা একত্রেই নিরাপদে পাসিং করে দেন অসাধু কিছু কর্মকর্তা। কোটি কোটি টাকার স্বর্ণের বার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করানোর অন্যতম খলনায়ক জামাই ফারুক।

কুমিল্লা ও নোয়াখালীর অন্তত ১০টি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন জামাই ফারুক। তার ব্যবসায়িক জোন মধ্যপ্রাচ্য। শুধু চোরাচালানই নয়, মানবপাচারেও জড়িত তিনি। সূত্রটি জানায়, কুমিল্লার একটি শক্তিশালী চক্র ফারুককে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ইয়াবা পাচার করে। ফারুকের সিগন্যালেই ঢাকার রুট ক্লিয়ার পেলে এসব অবৈধ পন্য ট্রান্সপোর্ট হয়।

ফারুকের রয়েছে বেশ কিছু এজেন্ট যারা চোরাইপন্য পাচারে কখনো যাত্রী কখনো ডিলার হয়ে কাজ করে। বুড়িচং ময়নামতি রূপসাগর পশ্চিমপাড়ের মৃত আবদুর রবের ছেলে শফিকুল ইসলাম অরুন ফারুকের অন্যতম সহযোগী। এছাড়াও চোরাচালানে জড়িত জামাল, ফারুক, তোফাজ্জলসহ ৫জন বর্তমানে সৌদি আরবের কারাগারে আটক রয়েছে। সেকান্দর চেয়ারম্যানের ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে আরিফ বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে আটক রয়েছে ইয়াবা পাচারের মামলায়। জামাই ফারুকের অন্যতম সহযোগী আরিফ কারাগারে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াবার ব্যবসা। অভিনব পদ্ধতিতে এসব ইয়াবার চালান নির্ধারিত যাত্রীদের লাগেজে করে বিমানের চেকপোষ্ট পার করিয়ে দেন ফারুক। মানবপাচার ব্যবসায় রাতারাতি শিল্পপতি বনে যাওয়া বরুড়ার এক সমাজসেবকও জড়িত রয়েছেন অবৈধ মাদক পাচার ও স্বর্ণ চোরাচালানে।

জামাই ফারুকের একাধিক গাড়ি ও অসংখ্য ফ্লাট আর বিলাসী জীবন যাপনে দীর্ঘদিন ধরেই নিজ এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে তার অর্থবিত্তের উৎস কি। বিমানকর্মী ফারুক আটকের পর এসব অনুসন্ধানে নামে গোয়েন্দা সংস্থা।

আরো পড়ুন