বিশ্বজয়ে নেপথ্য নায়ক কুমিল্লার ডিকেন্স-জাকি
প্রথমবারের মতো বিশ্বজয় করেছে বাংলাদেশ। এসেছে ক্রিকেটের বহুল কাক্সিক্ষত বিশ্বকাপ শিরোপা। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! সে আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ; আনন্দে আত্মহারা কুমিল্লা। অবশ্য ক্রিকেটপ্রেমী কুমিল্লাবাসীর বাড়তি উল্লাসের কারণও আছে যথেষ্ঠ। চ্যাম্পিয়নদের হয়ে মাঠে বুক চিতিয়ে লড়েছেন কুমিল্লার মাহমুদুল হাসান জয়। তেমনি মাঠের বাইরে থেকে ম্যাচ জয়ের ছকও এঁকে দিয়েছেন কুমিল্লার দুই কৃতী সন্তান ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স ও মাহবুব আলী জাকি। তাঁরা দু’জনই যুব বিশ্বকাপ দলের কোচিং স্টাফ। ডিকেন্স ফিল্ডিং কোচ; জাকি আছে বোলিং নিশানা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বেÑ বোলিং কোচ।
শিরোপা-উল্লাসে আত্মহারা কুমিল্লাবাসী বলছেন- স্বপ্নের বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্য নায়ক কুমিল্লার ডিকেন্স-জাকি। বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্নের শিরোপা ছোঁয়ার এমন মধুর উপলক্ষ্য এনে দেয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন তারা। শুভেচ্ছা অভিনন্দনের পাশাপাশি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছেÑ দেশে ফেরার পর ঊষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হবে কুমিল্লার এ কৃতী সন্তানদের।
অনুর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপের বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পর ক্রিকেট বোদ্ধা ও অনুরাগীরা বলছেন, ‘যুবাদের বিশ্বকাপ জয়ে কুমিল্লা তথা বৃহত্তর কুমিল্লার অবদানই তুলনামূলক বেশি’। কথাটা অবশ্য ফেলে দেয়ার মতোও না এতটুকু।
কারণ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সাফল্যে যেমন প্রাণপ্রণ লড়েছেন বৃহত্তর কুমিল্লার দুই খেলোয়াড়Ñ মাহমুদুল হাসান জয় ও শামীম হাসান (চাঁদপুর); তেমনি মাঠের বাইরে থেকেও জয়ের ছক এঁকে দিয়েছেন বৃহত্তর কুমিল্লারই তিন নেপথ্য কারিগর। কুমিল্লার ডিকেন্স- জাকির পাশাপাশি যুবদলের কোচিং স্টাফে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়র স্বজল চৌধুরী। একসময়ের মাঠ কাঁপানো ফাষ্ট বোলার সজল এখন জাতীয় যুবদলের টিম ম্যানেজার।
বিষয়টির সাথে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফরমেন্স কোচ এমদাদুল হক এমদু। তবে তার আগে যুব বিশ্বকাপ জয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিছেন তিনি। ২০০৮ যুব বিশ্বকাপ দলের কোচিং স্টাফ এমদু বলেন, তরুণ এ ক্রিকেটাররা জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। বহুল প্রতিক্ষীত শিরোপার স্বাদ এনে দিয়েছেন। আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
শিরোপাজয়ের নেপথ্য নায়কদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিকেন্স ও জাকি কুমিল্লার ক্রিকেটাঙ্গণে পরিচিত মুখ। শিরোপা জয়ের পেছনে তারা বিশাল অবদান রেখেছেন। তাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে, আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরেকটু বাড়িয়ে যদিও বলিÑ মাঠের দুই যোগ্য ক্রিকেটার জয়-শামীম এবং মাঠের বাইরের তিন নেপথ্য কারিগর ডিকেন্স-জাকি ও স্বজলের সমন্বয়ে শিরোপা জয়ে বৃহত্তর কুমিল্লার অবদান অনস্বীকার্য।
এমদাদুল হক এমদু আশাবাদি, যুব ক্রিকেটারদের সাফল্যক্ষুধা এখানেই থেমে যাবে না। ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে আরো অনেক অনেক শিরোপা জিতবে তারাÑ এ প্রত্যাশা তাঁর।
এদিকে কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রুমেন বলেছেন, ‘এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাইÑ যুব বিশ্বকাপের শিরোপা ‘মুজিবার্ষিকীর’ শ্রেষ্ঠ উপহার।’
তিনি বলেন, ‘যুব বিশ্বকাপ সাফল্যের তিন নায়কÑ ফিল্ডিং কোচ ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, বোলিং কোচ মাহবুব আলী জাকি ও ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয়কে আমরা কুমিল্লায় সংবর্ধিত করবো।’ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশের ফেরার সুবিধাজনক সময়ে এ আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
যুবাদের বিশ্বকাপ জয়ের দুই নেপথনায়ক কুমিল্লার কৃতী সন্তান ডিকেন্স ও জাকিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি। তিনি বলেন, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স ক্রিকেট কমিটির সদস্য। কুমিল্লার ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে তাঁকে সাথে নিয়ে কাজ করতে পারবোÑ এজন্য একটু বেশিই ভালো লাগছে। পাশাপাশি মাহাবুব আলী জাকিও ক্রিকেট-আন্ত:প্রাণ মানুষ। সকলের সমন্বয়ের কুমিল্লার ক্রিকেটকে এগিয়ে নেবো আমরা।
জেলা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম রনি বলেন, মাঠের পারফরমেন্সে তাক লাগিয়ে দেয়া মাহমুদুল হাসান জয়ও আমাদের এই কুমিল্লার সন্তান। স্কুল ক্রিকেট ক্যাম্পেইন থেকে উঠে আসা এ তরুণের অনেক প্রহর কেটেছে কুমিল্লা স্টেডিয়ামের আলো-ছায়ায়।
শিরোপাজয়ে অবদান রাখা সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে সমন্বয় করে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে কুমিল্লার তিন কৃতীকে সংবর্ধনা জানাবো।
এদিকে টাইগার যুবাদের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে নেপথ্যে অবদান রাখা কোচিং স্টাফ ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স ও মাহবুব আলী জাকিকে হার্দিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়। তিনি বলেন, খেলোয়াড়ি জীবনে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স অত্যন্ত মেধাবী ও বিচক্ষণ ছিলেন। জাতীয় লীগের চৌকষ ক্রিকেটার ডিকেন্স খেলেছেন জাতীয় দলেও। তিনি তাঁর মেধার পরিচয় রেখেছেন যুবদলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব নিয়েও। মাঠের বাইরে জয়ের ছক কষে সহযোগিতা করেছেন শিরোপা জয়ে। তিনি আমাদের গর্ব। তাঁকে অভিনন্দন। পাশাপাশি অভিনন্দন জানাই আরেক ক্রিকেট আন্ত:প্রাণ মানুষ মাহবুব আলী জাকিকেও। শিষ্যদের শিরোপা জয়ের মন্ত্র এঁকে কুমিল্লাকে আলোকিত করেছেন তিনিও। ভবিষ্যতেও যেনো তাঁদের এ সাফল্যধারা বয়ে চলে সে কামনা করছি।