কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু ও বিভাগ বাস্তবায়ন দাবি – সংসদে এমপি সীমা
কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু, বিভাগ বাস্তবায়নসহ কুমিল্লাকে উন্নয়নে বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরে কুমিল্লার সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, কুমিল্লাবাসীর প্রাণের দাবি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, গোমতী নদীর উত্তর পাড়ের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক চলাচলের জন্য আরো ৩টি ব্রীজ, কুমিল্লা শহরতলীতে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট স্থানে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ পুনর্বাসন করা, কুমিল্লা বিমান বন্দরটি সংস্কারপূর্বক চালু করা এবং সর্বশেষে কুমিল্লায় বিভাগ ঘোষণার জন্য দাবী জানাচ্ছি। পরিশেষে আমার নির্বাচনী এলাকার প্রিয় জনগণকে তাদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও উন্নতি কামনা করে বঙ্গবন্ধুর অর্জিত লাল সবুজের পতাকা ও রাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে বক্তব্যে এমপি সীমা এসব দাবি তুলেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্যে সংসদে সাংসদ সীমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতবার সরকার গঠন করেছেন, ততবারই কুমিল্লার সৎ ও যোগ্য নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বানিয়েছেন। সেজন্য আমি কুমিল্লাবাসীর পক্ষে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রী, সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লার উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, অবকাঠামোগত সহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মান উন্নয়নে ব্যাপক যুগোপযোগী সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ধমনীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করছি। এই রক্ত কোনোদিন কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। ইনশাল্লাহ। জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছেন, তার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের সাধারণ মানুষ। আমরা দেখেছি, এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালু হওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য সারাদেশের মানুষ দুহাত তুলে দোয়া করেছেন এবং নেত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাদাকে সাদা বলতে ভালোবাসেন। কালোকে কালো বলার সৎ সাহসিকতা তাহার আছে।
কোভিড-১৯ আতঙ্ক থেকে মানুষকে সচেতন ও সতর্ক করা, ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও দাফন কার্যে সহায়তা প্রশংসা করে অধিবেশনে তিনি বলেন, বিশ্ব আজ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। এই ক্রান্তিলগ্নে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সময়ে যোগ্য নেতৃত্বের কারণে আল্লাহর রহমতে এদেশের মানুষ কেউ না খেয়ে মরে নাই। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে রেশনিং এর ব্যবস্থায় আনা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনসহ সকল শ্রেণীর মানুষ মাঠ পর্যায়ে কাজ করে মানুষকে কোভিড-১৯ আতঙ্ক থেকে সচেতন করা, সতর্ক করা, ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া, মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও দাফন কার্যে সহায়তা করেন। মহামারী কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হওয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই তিনকোটি মানুষকে বিনামূল্যে ভালো মানের মাস্ক বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিঃসন্দেহেই এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রশংসার দাবিদার তিনি।
এমপি সীমা বলেন, আজ জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সর্বত্রই বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। সমুদ্র সীমা জয়ের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির অবারিত দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান। কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর আজ বর্তমান সরকারের উন্নয়নেরই মাইলফলক। আকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বাংলাদেশ বিমানবহরে নতুন সংযুক্ত ড্রীম লাইনার, আকাশবীনা, পাল্কি, হংসবলাকা সহ অসংখ্য বোয়িং বিমান। স্থলে স্বপ্নের মেট্রোরেল, অগণিত ফাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল এবং জাতীয় মহাসড়কগুলো চার থেকে ছয় লেনে উন্নীত আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল, গ্রামকে শহরে উন্নীত করার পরিকল্পনা, অসংখ্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ক্ষুদা ও দরিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাই বলতে হয়, হে মহান পিতা দেখে যান, ক্ষুদার্থ বাংলাদেশ আজ ক্ষুদামুক্ত, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ। খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ পরিবেশ উন্নয়নে এবং দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জুলীয় কুড়ি উপাধিতে ভুষিত জাতির পিতা দেখে যান, আপনার ¯েœহধন্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৬ কোটি বাঙালীর পরম আশ্রয়, পরম নির্ভরতার প্রতীক। তিনি আজ চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ। আপনার মতই দেশেপ্রেমে এক অনন্য জননন্দিত নেত্রী, বিশ্বের অন্যতম সৎ, কর্মঠ রাষ্ট্রপ্রধান।
সংসদ অধিবেশনে নারী সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনের, যৌবনের দীর্ঘ সময় কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে আমার পিতা প্রবীণ রাজনীতিবিদ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট রাজনীতি করেছেন। আমার পিতা ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমার পিতাকে স্নেহ করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য তোমাকে রাজনীতি করতে হবে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমার পিতা আফজল খান জীবন-যৌবনের প্রতিটি অধ্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। জাতির পিতার আদর্শের অনুপ্রেরণায় জাতিকে নিরক্ষরমুক্ত করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমার পিতা কুমিল্লা শহরে ও শহরতলীতে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যা কুমিল্লার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন পূর্বেও আমার পিতার চিকিৎসার সকল দায়ভার গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে আমি স্বচক্ষে দেখিনি। পিতামাতার কাছ থেকে সবসময় শুনতাম কিন্তু আমি ছাত্রজীবনে শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সন্তানের মত স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি। ১৯৮৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন। তখন তিনি কুমিল্লা জেলা সফরে গিয়েছিলেন। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলছি, নেত্রী সেসময় পাঁচ দিন, ৪ রাত আমাদের বাড়িতে থেকে বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করেন। সৌভাগ্য আমার আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে একরাতে বেশ কিছু সময় কাটানোর সুযোগ পাই। তখনকার সেই বঙ্গকন্যাকে যা দেখেছি। আজও তিনি তেমনটি আছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আন্তরিক স্নেহ ভালোবাসার মাধ্যমে এই মহান সংসদে একজন সংরক্ষিত নারী আসনে আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এই মহান সংসদে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।