বুড়িচংয়ের বিজয়পাড়া এলাকায় চোরের উপদ্রব
বুড়িচং প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার বুড়িচং সদরের বিজয়পাড়া এলাকায় চোরের উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। গত দু’মাসে দুইটি ডাকাতিসহ ২০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে চোরের দল দিনরাতে হানা দিয়ে নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কারসহ দৈনদিন তৈজসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। চোরের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত আবেদন বুড়িচং থানা অফিসার ইনচার্জ এর নিকট জমা দিয়েছে। এতে করেও বন্ধ হচ্ছে না চুরির ঘটনা।
সরেজমিনে স্থানীয়দের কথা বলে ও থানায় জমা দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, বুড়িচং উপজেলার সদর ইউনিয়নের জগতপুর পূর্ব ও উত্তরপাড়ার কিছু অংশের সমন্বয়ে বিজয়পাড়া নামে এলাকাটিতে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের বসবাস।গত বেশ কিছুদিন ধরে এই এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িয়ে পরেছে। এসব মাদকসেবী নিয়মিত মাদক গ্রহন করে । সম্প্রতি ওই সব মাদকসেবী মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য দিনেরাতে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে হানা দিয়ে মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, টিভি-ল্যাপটপ, বিভিন্ন দামি মালামালসহ দৈনন্দিন ব্যবহৃত তৈজসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার কিছু চিহ্নিত মাদকসেবী প্রতিদিনের মাদক সেবনের অর্থ যোগানের জন্য এই চুরি সংঘটিত করছে বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা। এ বিষয়ে বুড়িচং থানায় একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেও ফলপ্রসু কোন সমাধান পাচ্ছে না ভোক্তভোগীরা। উল্টো দিনের পর দিন চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে।
গত কয়েকদিন আগে বুড়িচং সদরের ফল ব্যবসায়ী ইউনুস দিনভর ফল বিক্রি শেষে বিকিকিনির টাকাসহ রাতে বাড়ী যান। ফল বিক্রির ৭৪ হাজার টাকাসহ তাঁর পরনের প্যান্টটি বিছানার পাশে ঝুলিয়ে রেখে রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন জানালার পাশে তাঁর প্যান্টটি পড়ে আছে। প্যান্টের পকেটে রাখা ৭৪ হাজার টাকা নেই। রাতের কোন এক সময় চুরের দল কৌশলে জানালা খুলে লাঠির সাহায্যে প্যান্টটিকে জানালার পাশে নিয়ে এসে টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। গত মাসের শেষের দিকে এই ঘটনাটি ঘটে।
এছাড়াও একই এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি চাঞ্চ্যলকর চুরির ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে হাজী মোঃ সেলিমের দোকানের পেছনের অংশের টিনের বেড়া কেঁটে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও দোকানে রক্ষিত মালামাল নিয়ে যায় চোরের দল। ওই এলাকার নেয়ামত উল্লাহ জানান, চোরের দল তার ছেলে কামরুলের ৩০ হাজার টাকা ও কামরুলের স্ত্রীর স্বর্ণের চেইন চুরি করে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা আরো জানান, বিটিসিএল এ কর্মরত বিল্লাল হোসেনের ঘর থেকে তাঁর বোনের গলার চেইন, মোবাইল ফোন ও ৩০ হাজার টাকা, ও প্রতিবেশী শামীমের স্ত্রীর মোবাইল ফোন, হামিদ মিয়া ও ছাদেকের দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় চোরের দল। এমন সব চুরির ঘটনার সম্প্রতি স্থানীয় খোকন মিয়া ও ইউনুস মাষ্টারের বাসায় দুটি দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। খোকন মিয়ার বাসায় স্থানীয় একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক ভাড়ায় থাকতেন। ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কিত স্কুল শিক্ষক পরদিনই বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
চুরির ঘটনা এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি সময়ে চোরের দল একই এলাকায় হানা দিয়ে আয়েত আলীর ছেলে সুমনের ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্থানীয় কাউছারের স্ত্রীর একটি দামি মোবাইল ফোন, ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহীদ মিয়ার মেয়ের কানের দুল, আবুলের ছেলে সাদ্দামের মোবাইল ফোন, বাড়ির পাশে রাখা ইসহাক মিয়ার গাছের গুড়ি, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য খালেকের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা, নজু মিয়ার ১ লাখ টাকা, পুলিশ সদস্য ইব্রাহিমের মোবাইল ফোন এ নিয়ে যায় চুরের দল।
তবে এ সকল চুরির ঘটনায় একাধিক বার থানায় তথ্য উপাত্তসহ সন্দেহভাজন চোরদের নামোল্লেখসহ অভিযোগ দায়ের করা হয়। এছাড়ও চোরের হাত থেকে করে নিস্তার পেতে এলাকায় সভা-বৈঠকও হয়। সভায় চিহ্নিত কিছু চোর যাদের মধ্যে জগতপুর পূর্বপাড়া এলাকার তবদুল মিয়ার ছেলে কামরুল, রশিদ মিয়ার ছেলে জীবন ও বুড়িচং উত্তরপাড়া এলাকার নূরু মিয়ার ছেলে আমিনের কাছ থেকে আর চুরি করবেনা মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়। কিন্তু এতেও বন্ধ হচ্ছে না চুরির ঘটনা।
গত ৩ নভেম্বর রাতে বুড়িচং অগ্রণী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার নূরুল আমীন কাজলের বাড়ীতে এইক কায়দার হানা দেয় চুরের দল। ড্রইং রুমের জানালা কেটে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হয়ে দেয়ালে থাকা ৩২ ইঞ্চি একটি এলিডি টিভি খুলে নেয় তাঁরা। সকালে জানালার পাশে ভাঙ্গা অবস্থায় পাওয়া যায় টিভিটি। এ বিষয়ে নূরুল আমীন কাজলের বাবা অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাজী মোঃ আবদুল লতিফ বুড়িচং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এছাড়া ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যসহ এলাকার ৫৪ জন ব্যাক্তির গনস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র দেয়া হয় থানায়। ওই অভিযোগপত্রে চোরদের নাম ঠিকানাও দেয়া হয়। চাঞ্চ্যলকর এতগুলি ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত চোরদের আটক করতে ব্যার্থ হয়েছে। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরীকদের দাবী এলাকা থেকে মাদক সেবীদের ও চিহ্নিত চোরদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলেই এসকল অপরাধ কমে আসবে।