কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের আধারে বিজ্ঞাপনের গেইট
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের আধারেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেইটসহ বিভিন্ন স্থানে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ‘গুড লাক স্টেশনারী’ এর বিজ্ঞাপন সম্বলিত ডিজিটাল বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ বিলবোর্ডগুলো বসানো হয়। এ নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোজ নিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেইট, আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে এমনকি উপাচার্যের বাসভবনের সামনেও বসানো হয়েছে গুডলাকের বিজ্ঞাপন সম্বলিত বিলবোর্ড। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকল মহলে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরেও সবার কাছে হাস্যকর হিসেবে উপস্থাপন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের বিলবোর্ডটির গুড লাক লেখা অংশ কেটে ফেলেছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিলবোর্ডটিতে কাগজ দিয়ে গুড লাক অংশটি মুছে দেয়া হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে শুক্রবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইটের বিলবোর্ডটি খুলে নিতে দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রাতারাতি বিলবোর্ড বসানো নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফেসবুকে এক শিক্ষার্থী তার স্ট্যাটাসে লিখেন, “পাবলিক ভার্সিটির মেইন গেট যদি স্পন্সর দিয়ে বানাতে হয় তাহলে কতটা কমার্শিয়াল চিন্তা চেতনা ধারণ করেন আপনারা ভেবে দেখেছেন? ও আচ্ছা আপনাদের তো আবার এসব ভাবাভাবির সময় নেই। সেলুট আপনাদের মত প্রশাসনকে। আর হ্যা, ভার্সিটির শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে যে আকাশ পাতাল বৈষম্য আপনারা তৈরি করেছেন তাতে কিছুদিন পর আপনাদের সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা ভেবে এখনই আমি শিউড়ে উঠি।”
ফেইসবুকে আরেকজন শিক্ষার্থী লিখেন, “ফাইজলামির একটা সীমা আছে। প্রশাসনের ভালো গেইট করার মুরোদ নাই সেটা আমাদের জানা আছে। কিন্তু এই ফালতু টাইপের বিজ্ঞাপন মার্কা থার্ডক্লাস গেইটের মানে কি? কয়দিন পর ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা দিতে এসে এই গেইট দেখে ছেলেমেয়েরা হাসাহাসি ছাড়া আর কিছুই করবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা থাকলে প্রশাসন এই কাজ করতে পারতো না।”
এছাড়াও ফেইসবুকের নিজস্ব টাইমলাইনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘‘নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার উপাচার্য এবং প্রক্টর অনুষদগুলোর নাম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে শেষ মুহুতের্র বানিজ্য করে যাচ্ছেন।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা, রেজিস্ট্রার জানে’’ এ কথা বলে দুপুর ১২ টার দিকে নামাজে আছি বলে ফোন কেটে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো: মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ যদি সৌজন্যে উন্নয়নমূলক কিছু করে দেয় তাতে তো সমস্যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বাঁচলো।’’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কিছু সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ করার কথা, কিন্তু ফটক গুলোতে এ ধরনের বিলবোর্ড লাগানোর ব্যাপারে কোন কথা হয় নি। আমি এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’