কুমিল্লায় পেটে বাচ্চা রেখে সেলাই, ক্ষতিপূরণ পাবেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লায় জমজের এক সন্তানকে পেটে রেখে অস্ত্রোপচার শেষ করার ঘটনায় মা খাদিজা আক্তারকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
কুমিল্লার লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে এই ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ব্যবস্থা নেওয়ার আগ পর্যন্ত ওই চিকিৎসককে অস্ত্রোপচার থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ এর আগে দেওয়া রুল নিষ্পত্তি করে রোববার এ রায় দেয়। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন শুনানিতে অংশ নেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের পক্ষে ছিলেন আব্দুল মতিন খসরু।
এছাড়া অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক হোসনে আরা বেগমের পক্ষে শুনানি করেন এ কিউ এম সোহেল রানা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
আইনজীবী মিলন বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সরকারি মালিগাঁও হাসপাতালের সহকারী সার্জন হোসনে আরা তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ খাদিজা আক্তার (১৮) নামে এক প্রসূতির যমজ সন্তানের একজনকে ভূমিষ্ঠ করিয়ে আরেকজনকে পেটে রেখেই অস্ত্রোপচার সেলাই করেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
খাদিজার মা আমেনা বেগমের অভিযোগ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর হোসনে আরা ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ তার মেয়ের অস্ত্রোপচার করেন। তার গর্ভে দুটি সন্তান থাকলেও অস্ত্রোপচার করে তিনি একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ করান; আরেকটি সন্তানকে টিউমার বলে অপারেশনের কাজ শেষ করেন।
এরপর আমেনা এক মাস ধরে খাদিজাকে নিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছুটোছুটি করেন। পরে হোমনার একটি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাম করলে চিকিৎসক জানান, খাদিজার পেটে টিউমার না, আরেকটি সন্তান রয়েছে। পরে তারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে ঘটনাটি প্রকাশের পর দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মো. জালাল হোসেন চিকিৎসক হোসনে আরাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠান। গঠন করেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
প্রাথমিক তদন্তের পর ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি’ সিলগালা করে দেন সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান। ওই ঘটনায় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে পর গত ২৯ অক্টোবর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনজনকে তলব করে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন, কুমিল্লার গৌরীপুরের লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক শেখ হোসনে আরাকে ৭ নভেম্বর হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
ক্লিনিকটির মালিক ও অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক আদালতে দুই দফা হাজিরের পর রোববার রায় ঘোষণা করল হাই কোর্ট।