দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জে বাঙ্গি তোলায় ব্যস্ত কৃষকরা
সবে আকাশে সূর্য উঠেছে। দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের টামটা গ্রামের চারদিকে মানুষের ছুটোছুটি। সবার সেই একই ব্যস্ততা, জমি থেকে বাঙ্গি তুলে আনতে হবে। মৌসুমী ফল এটি। ইতিমধ্যে বিশাল চকের জমির মাঝখানে তৈরী খুপরীর মানুষগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সারারাত বাঙ্গি পাহারা দিয়ে ঘুমঘুম ক্লান্ত দেহ তাদের। তবুও সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে, গ্রামের ভিতর থেকেও দলে দলে আসছে লোক।
সকাল ৭টা না বাজতেই নারী পুরুষ, ছেলে বুড়ো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঙ্গি তোলায় মহাব্যস্ত। ১০ টার মধ্যে ফরিয়াদের হাতে বাঙ্গি তুলে দিতে না পারলে কপালে ভোগান্তি আছে তাদের। নির্ঘাত নির্ধারিত হাট ধরানো যাবে না। গাছ থেকে পাড়া বাঙ্গিগুলোও আর কিছুতেই ঘরে রাখা সম্ভব না, পচে সব সর্বনাশ হয়ে যাবে।
এটি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেঁষা কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের টামটা গ্রামের ভোরবেলার চিত্র। এ গ্রামের কম-বেশি সবাই বাঙ্গি চাষের সঙ্গে জড়িত। এখানে দিন দিন বাঙ্গি বা ফুটি চাষ এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে যে, এখন এ গাঁয়ে আর একটিও পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা অন্তত বাঙ্গি চাষ করে না।
এলাকায় জনশ্রুতি, শ’তিনেক বছর আগে এ বাঙ্গির বীজ এসেছিল সুদূর চীন থেকে। সেই থেকে আজও এখানে বাঙ্গির চাষ হচ্ছে। এটি এক ধরনের ফুটি। এ বীজ চীন থেকে এসেছিল বলে এখানকার অধিবাসীরা একে চীনাল আবার কেউ কেউ চীনা বাঙ্গিও বলে থাকে। এর প্রকৃত মৌসুম মার্চ-মে বেলে-দোঁআশ মাটিতে বাঙ্গি বেশ ভাল ফলে। খুব অল্প সময়ের মৌসুমী ফল এটি। মৌসুমটা আসতে না আসতেই যেন চলে যায়। সময় স্বল্বতার কারণে কৃষকের ব্যস্ততাও অনেক। বছরে একবারই ফলে এই ফল। ডিসেম্বরের শুরুতেই এ চারা রোপণ শুরু হয়। চলে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত। টানা তিন মাস ধরে কৃষকের সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। এ আবাদে আহামরি লাভ কিছু নেই, তবুও কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকার একটি বিরাট অংশ পূরণ হয় বাঙ্গি থেকে।
আবাদ খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তা যৎসামন্য জানালেন বাঙ্গি চাষি খলিল মিয়া। পাঁচ বিঘা জমিতে এবার তার বাঙ্গি ফলেছে। জমি তৈরী বীজ ও সার ক্রয়, চাষাবাদ খরচ সব মিলিয়ে তার ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে জমির অর্ধেকের বেশি বাঙ্গি বিক্রি হয়ে গেছে। এ বাবদ মোট পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। যে ধরনের ফলন হয়েছে তাতেও আরও ২০ হাজার টাকা তার হাতে আসার কথা। সেই ফজরের আযানের পর নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়েছেন জমিতে। ৪৭টি বাঙ্গি জমি থেকে তোলা হয়েছে তার। সকাল ৮টার মধ্যেই ফড়িয়া এসে তা নিয়ে গেছে। দাম মিলেছে ছোট বড় মিলিয়ে ৯ টাকা হারে ৪’শত ২০ টাকা। সকালে ব্যস্ততা কেবল খলিল মিয়ারই নয়। এই গাঁয়ের অশীতিপর রহিম, আলী আযম, আজগর মিয়া এরা সবাই সেই ভোরে বাঙ্গি ক্ষেতে ছোটে এসেছেন। ছেলে বুড়ো সবাই ব্যস্ত বাঙ্গি তোলা আর বিক্রি নিয়ে। সকাল ৯টা বাজতেই সারি সারি দল বেধে মাথায় নিয়ে মহাসড়কের দিকে এগোতে থাকে সবাই। এখানে বাঙ্গি বোঝাই করার অপেক্ষায় আছে বহু ট্রাক। সকাল ১০টা বাজতেই সড়কে লাইন বেঁধে রাখা বাঙ্গিগুলো ট্রাকে উঠাতে ব্যস্ত হয়েছে একটি দল। আস্তে আস্তে কৃষকেরা ব্যস্ততা কমতে শুরু করে। ইলিয়টগঞ্জ গ্রামটি ছোট হলেও বির্স্তীণ জমি রয়েছে এই গ্রামে । মাঠের পর মাঠ জুড়ে বাঙ্গির চাষ করা হয়েছে। এলাকাবাসীর মতে প্রতি মৌসুমে প্রায় ৬ লাখ বাঙ্গি ফলে বলে ধারনা করা হয়।
কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বাঙ্গির রয়েছে ওষুধি গুণ। বাঙ্গি শরীরের জ্বালা-পোড়া কমিয়ে দেয়, গরম শরীর ঠান্ডা রাখতে বাঙ্গির জুড়ি নেই। এছাড়া বাঙ্গি থেকে সুগন্ধী তৈরী করা হয়। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এ এলাকার প্রায় ৫শ একর জমিতে বাঙ্গী চাষ হয়েছে এই মৌসুমে।