৯ ডিসেম্বর দাউদকান্দি মুক্ত দিবস
শামীমা সুলতানাঃ ৯ ডিসেম্বর দাউদকান্দি মুক্ত দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সমগ্র দেশে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ২৫ মার্চ রাতের পর দেশব্যাপি যুদ্ধ শুরু হলে অন্যান্য স্থানের ন্যায় কুমিল্লার মুক্তিপাগল মানুষজনও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ যুদ্ধ চলাকালে দাউদকান্দির গোয়ালমারী এবং বাতাকান্দিতে (বর্তমান তিতাস থানা) যুদ্ধে ৭০ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে খতম হয়। প্রধান ক্যাম্প দাউদকান্দির ডাকবাংলা ছিল পাকসেনাদের ধর্ষণ এবং নির্যাতনাগার। এ ক্যাম্পে নিয়ে অসংখ্য বাঙ্গালিকে দীর্ঘ ৯ মাস অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং লুট করা হয়েছে মা-বোনদের ইজ্জত।
দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ’৭১ এর ডিসেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলায় টিকতে না পেরে পাকসেনারা দেশের বিভিন্ন স্থান ছেড়ে যখন ঢাকা অথবা নিকটস্থ সেনানিবাসের দিকে হটতে থাকে তখন কুমিল্লা এবং দাউদকান্দির বেলায়ও একই ঘটনা ঘটে। ৭ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনী সীমান্তবর্তী কুমিল্লায় বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ঘাঁটির উপর হামলা শুরু করে। প্রচন্ড হামলায় ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের সেনারা পশ্চিম দিকে হটে যাওয়ার কালে তাদের বেশ কয়েকজন লালমাই পাহাড় ঘেঁষে ময়নামতি সেনানিবাসে যায়, আবার কেউবা বরুরার দিকে পালায়। মিত্রবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে বিমানঘাঁটি ঘিরে ফেললে পাকসেনারা বিপাকে পড়ে। এদিকে সীমান্ত এলাকায় বিবির বাজার, বাঘেরচির ও ভাটপাড়া এলাকা দিয়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করলে ৭ ডিসেম্বর রাতেই কুমিল্লা বিমান ঘাঁটির পতন ঘটে। ৮ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমত কুমিল্লা টমছমব্রীজ এলাকায় এবং পরে টাউনহল এলাকায় স্বাধীন বাংলার মুক্ত আকাশে পতাকা উড়ায়। কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার মুক্তিযোদ্ধারা দ্ধিগুন উৎসাহ উদ্দীপনায় দাউদকান্দির দিকে অগ্রসর হয়।
৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মুক্তিযোদ্ধাগণ উওর এবং দক্ষিণ পার্শ্ব থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের উপর হামলা চালালে পাক সেনারাও পাল্টা জবাব দিতে দিতে পশ্চিম দিকে হঁটতে থাকে। মিত্রবাহিনীর কাভারিং সেলিং এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমনের মুখে টিকতে না পারে পাকসেনারা তাদের দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ এবং শহীদনহরস্থ অয়ারল্যান্স ক্যাম্প গুটিয়ে দাউদকান্দি ডাকবাংলা ক্যাম্পের দিকে হঁটতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত এবং ৯ ডিসেম্বর সারাদিন এ অবস্থা চলারপর পড়ন্ত বেলায় পাকসেনারা দাউদকান্দি সদরস্থ ডাক বাংলাতে জড়ো হয়ে নৌপথে ৮টি জাহাজ বোঝাই করে ঢাকার দিকে পালিয়ে গেলে সন্ধ্যার পূর্বক্ষণে দাউদকান্দি সদরে মুক্তিযোদ্ধাগণ বাংলার মুক্ত আকাশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান। এখনো যুদ্ধের মারণাস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।