কুমিল্লা মুক্ত দিবস উদযাপন
দেলোয়ার হোসেন জাকিরঃ ঐতিহাসিক ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর আয়োজনে সকাল ৯টায় কুমিল্লা টাউন হলে জাতীয়, দলীয় পতাকা উত্তোলন, র্যালী ও নগর উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুারালে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কুমিল্লা মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেণ কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাংগীর আলম, পুলিশ সুপার মোঃশাহ আবিদ হোসেন, সাবেক কমান্ডার শফিউল আহম্মেদ বাবুল। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম কমান্ড, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন স্কুল ও আওয়ামীলীগ যুবলীগ সেচ্ছা সেবকলীগসহ পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর প্রর্যন্ত টাউনহল মুক্ত মঞ্চে সন্ধায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কুমিল্লা মুক্ত দিবস বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন কালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি বলেন উন্নত বাংলাদেশ তৈরির লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে লক্ষ নির্ধারণ করেছে আমরা সকলে মিলে সে লক্ষে পৌছুতে হবে।১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলর চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী কুমিল্লা বিমানবন্দরে পাকবাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করে। মিত্র বাহিনীর ১১ গুর্খা রেজিমেন্টের আর কে মজুমদারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিমানবন্দরের তিন দিক থেকে আক্রমণ চালানো হয়।
সীমান্তবর্তী বিবির বাজার দিয়ে লে. দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এবং পর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে কুমিল্লা শহরের ভাটপাড়া দিয়ে এবং চৌদ্দগ্রামের বাঘেরচর দিয়ে এসে বিমানবন্দরের পাকসেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। রাতভর পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
কতিপয় পাকিস্তানি সেনা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লা বরুড়ার দিকে ও ময়নামতি সেনাছাউনীতে ফিরে যায় এবং কয়েক জন আত্মসমর্পণ করে। এক পর্যায়ে পাকসেনাদের বিমানবন্দরের প্রধানঘাঁটি দখলে নেয় মুক্তিসেনারা। আর এভাবেই একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভোরে কুমিল্লা হানাদার মুক্ত হয়।
এদিন ভোর থেকে মুক্তিসেনারা শহরের চকবাজার, রাজগঞ্জ, টমছমব্রিজ ও গোমতী পাড়ের ভাটপাড়া দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে শহরে প্রবেশ করে। তখন রাস্তায় নেমে আসে বিজয় উল্লাসে উদ্বেলিত জনতার ঢল। কুমিল্লার আপামর জনগণ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয় মুক্তিসেনাদের।