কুমিল্লায় বছরে প্রতারণার শিকার ৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী
কুমিল্লায় বছরে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অন্তত ৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। অধিক বেতনে প্রবাসে চাকরির চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে ভিসা, মেডিক্যাল, বিমানের টিকিট, বিদেশে যাওয়া, কাঙ্ক্ষিত চাকরি-বেতন না পাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে তারা নানাভাবে দালালদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন। কেউ সহায়-সম্পদ বিক্রি করে সরল বিশ্বাসে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জাল ভিসায় প্রবাসে গিয়ে পুনরায় দেশে ফিরে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। তবে এমন প্রতারণার হাত থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বাঁচাতে নানা সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
কুমিল্লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৯ জন বিদেশগামী কর্মীর নিবন্ধন হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৫ জন পুরুষ ও ১১ হাজার ১৬৪ জন নারী কর্মী রয়েছেন। এই জেলা থেকে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যান। এর মধ্যে অন্তত ৫ হাজার লোক প্রতারণার শিকার হন। শুধু প্রবাসে যাওয়া নিয়েই নয়, এর আগে পাসপোর্ট পেতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। পাসপোর্ট তৈরি থেকে বিদেশে যাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রতারকদের ফাঁদে পড়লেও বেশির ভাগ সময় তারা চুপ থাকেন।
কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে আরমান মিয়া জানান, ভিসা, মেডিক্যাল, বিমানের টিকিটসহ ৫ লাখ টাকা তুলে দেন চান্দিনা উপজেলার বাবুল মিয়ার হাতে। বাবুল মিয়ার জামাতা ওমানে লোক নেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় তিনি সরল বিশ্বাসে এই লেনদেন করেন। একপর্যায়ে নির্দিষ্ট দিনে রওনা করে ওমানের মাসকাট বিমানবন্দরে গেলে পুলিশ তাকে আটকে দেয়। জাল ভিসার কারণে সেখান থেকে তিনি ফেরত আসেন। এক বছর আগে ঘটে যাওয়া এই প্রতারণার ঘানি আজও টানছে তার পরিবার।
জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে পাসপোর্ট তৈরি করতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দালাল ছাড়া যদি পাসপোর্ট তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার আবেদন ফরমে শুধু ভুল থাকবে। দালালের মাধ্যমে যদি বেশি টাকা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়, তাহলে ভুল হলেও সমস্যা নেই। দালাল ছাড়া দিনের পর দিন এসে ধরনা দিলেও কাজ হবে না, ঘুরতে হবে মাসের পর মাস। জুতাজোড়া ক্ষয় হলেও মিলবে না পাসপোর্ট। এসব হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য দালালকে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করে সময়মতো পাসপোর্ট পেয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে দুবাই চলে যাব।’ এমন বিড়ম্বনা ও প্রতারিত হওয়ার কথা জানান বেশ কয়েক জন অভিবাসনপ্রত্যাশী।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘প্রতারণা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বাঁচাতে যেসব রিক্রুট এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কিংবা লাইসেন্স নেই, সেগুলো একেবারে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বৈধভাবে প্রবাসে যাওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।’
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ‘গত দেড় বছরে আমরা শত শত পাসপোর্টসহ অনেক দালালকে গ্রেফতার করেছি। তারা জেল থেকে বের হয়ে নতুন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নানাভাবে প্রতারণা শুরু করে। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে প্রতারণা বন্ধ করা যাবে না, এর জন্য জনসচেতনতা প্রয়োজন।
সূত্রঃ ইত্তেফাক