দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না, আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী

রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-এর গোপন বৈঠকের ঘটনায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মেজর সাদেকুলের স্ত্রী ও ‘অপারেশন ঢাকা ব্লকেড’ এর সক্রিয় এডমিন সদস্য সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও একই অপারেশনের ম্যানেজমেন্ট সদস্য আদনান বিন আব্দুল্লাহ চৌধুরীর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান বিভাগের ডিবি পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন। এ সময় সুমাইয়ার ৭ দিন এবং আদনানের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তিনি।
শুনানিতে সুমাইয়া আদালতের কাছে আবেগঘন আবেদন জানিয়ে বলেন, “দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না স্যার। আমি কোনো অন্যায় করিনি। কিছু জানার থাকলে এখানেই জিজ্ঞাসা করেন।”
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার, মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল কাইয়ুম নয়ন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তারা বলেন, বসুন্ধরার কে বি কনভেনশন হলে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং সংগঠনের নেতৃত্বের অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। সুমাইয়া নিজেকে এএসপি পরিচয় দিয়ে ৩-৪ শতাধিক মানুষের সঙ্গে মিটিং করেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন বলে অভিযোগ তুলে সর্বোচ্চ রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, “সরকার এত দুর্বল নয় যে একটি বৈঠকের মাধ্যমে পতন ঘটবে। এজাহারে সুমাইয়ার নাম নেই, সন্দেহমূলকভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারী, শিশু ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে রিমান্ডে শিথিলতার বিধান রয়েছে।”
শুনানি চলাকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য দেন সুমাইয়া জাফরিন। তিনি বলেন, “কে বি কনভেনশন হলে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেখানে কী ধরনের বৈঠক হচ্ছিল, তা আমি জানতাম না। এএসপি পরিচয়ে কেউ ঢুকেছে, অথচ দায় আমার ওপর দেওয়া হচ্ছে।”
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ সুমাইয়ার ৫ দিন এবং আদনানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের নিজ বাসা থেকে আদনান ও মিরপুর ডিওএইচএসের বাসা থেকে সুমাইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা এলাকায় কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩-৪ শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন। বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে ঢাকায় সমাবেশ, শাহবাগ দখল এবং দেশজুড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির পরিকল্পনা হয়।
এ ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানার উপপরিদর্শক জ্যোতির্ময় মণ্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুজ্জামান মোল্লার স্ত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা ও বরগুনার সোহেল রানারও দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।