কুমিল্লায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেত শিল্প, ভালো নেই কারিগররা

এক সময় বাঁশ দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালি ও সৌখিন পণ্য। এখনও গ্রামীণ উৎসব ও মেলায় বাঁশের তৈরি কুলা, চালন, খাঁচা, মাচাং, মই, চাটাই, ঢোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুড়ি, ডুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, মাথাল, বইপত্র রাখার র্যাকসহ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বসেন এর কারিগরেরা। দিন দিন বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের কারিগরেরা। বাঁশের তৈরি বিভিন্ন উপকরণকে জীবিকার প্রধান বাহক হিসেবে আঁকড়ে রেখেছে কুমিল্লার গুটিকয়েক পরিবার।

গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। তবে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কাছে সহযোগিতা জানান বাঁশ-বেত শিল্পের সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, দেবিদ্বারের দীর্ঘভূমি, মাধবপুর, রামনগর চণ্ডীপুর, ধান্যদৌল নন্দীপাড়া ও সাহেবাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কিছু পরিবার ই বাঁশ আর বেত দিয়ে তৈরি শিল্পের মাধ্যমেই তাদের জীবিকানির্বাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বংশপরম্পরায় পাওয়া এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন তারা।

এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ গ্রামের ৪ পরিবার, রাগনগর গ্রামের ১ শত পরিবার, ধান্যদৌল গ্রামের ১৫ পরিবার, দীর্ঘভূমি গ্রামের ৪ পরিবার ও মাধবপুর গ্রামে রয়েছে ৩০টি পরিবার।

কারিগররা জানিয়েছেন, সারা জীবন বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করেছেন। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই পণ্যের চাহিদা। মূল্য বৃদ্ধি, বাঁশের দুষ্প্রাপ্যতা আর প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী বাঁশের পণ্যের বাজার দখল করেছে। তাদের তৈরি কিছু পণ্য সাপ্তাহিক হাটসহ গ্রামগঞ্জে ফেরি করে বিক্রি করেন।

বেত শিল্পের কারিগর রাধা চন্দ্র নম বলেন, বাঁশ ও বেত শিল্পের মাধ্যমে এখন আর আমাদের সংসার চলে না। ক্রেতা সংকটসহ নানান সমস্যায় আমরা জর্জরিত। তাছাড়া দিন দিন দুষ্প্রাপ্যও হয়ে পড়ছে এ শিল্প সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে চাষাবাদসহ ঘরবাড়ি তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না। কিনতে হয় চড়া দামে। তাই জিনিসপত্র তৈরি করে বিক্রিও করতে হয় চড়া দামে। অথচ স্বল্পমূল্যে এখন মানুষ প্লাস্টিক সামগ্রী পাচ্ছে। যে কারণে বংশপরম্পরায় পাওয়া এ কাজ থেকে অনেকেই সরে পড়ছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ কাউছার হামিদ বলেন, বাঁশ-বেত শিল্প বাঙালির ঐতিহ্য। বাঁশ-বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ভূমিহীনরা যোগাযোগ করলে তাদের ভূমি পাওয়ার বিষয়ে আমি সুপারিশ করতে পারব। অথবা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বাঁশ চাষের জায়গা না থাকলে একই উপায়ে জায়গা পাওয়ার বিষয়ে আমি সুপারিশ করতে পারব।

আরো পড়ুন