কুমিল্লা কারাগার থেকে আসামির ছবি ফেইসবুকে, কারারক্ষী বরখাস্ত

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা কলেজছাত্র জামিল হাসান অর্ণব হত্যা মামলার প্রধান আসামির ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

কারাবন্দি আসামির ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠানোর অভিযোগে কারারক্ষী ইসমাইল হোসেন তুহিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।

বরখাস্ত হওয়া তুহিন বান্দরবানের লামা উপজেলার চাপাতলী গ্রামের বাসিন্দা।

হত্যা মামলার আসামির ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আসামির ভাই জেলখানায় থাকা ছবি পোস্ট করে অর্ণবের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, কারা আইন ভঙ্গ করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মঙ্গলবার কারারক্ষী তুহিনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা কারাগার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মার্চ কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন শাসনগাছা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জামিল হাসান অর্ণব (২৬)।

নিহত অর্ণব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (পাস) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন অর্ণবের মা ঝর্ণা আক্তার।

মামলায় শাসনগাছা এলাকার ফজলে রাব্বীকে (৩০) প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনার পরপর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পিস্তল ও গুলিসহ মামলার প্রধান আসামি ফজলে রাব্বীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিরা উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও রাব্বির জামিন হয়নি। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

ঈদুল আজহার আগের দিন ১৬ জুন কারারক্ষী তুহিন কারাগারে জেলারের বাসভবনের ছাদে দায়িত্ব পালনের সময় মোবাইল ফোনে ফজলে রাব্বীর কয়েকটি ছবি ও কয়েক সেকেন্ড ভিডিও ধারণ করে তার স্বজনদের কাছে পাঠান।

পরে ওই ছবি ও ভিডিও ফজলে রাব্বীর ভাই এ কে আল-আমিন খান তার ফেইসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ভাই সময় আসবে ইনশাল্লাহ’।

এ ঘটনার পর থেকে নিহত অর্ণবের পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

বৃহস্পতিবার অর্ণবের বাবা আজহার উদ্দিন বলেন, “এর আগে একবার আদালতে দাঁড়ানো ফজলে রাব্বীর ছবি তুলে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। পরে আবার জেলখানার ছবি ফেইসবুকে দিয়ে আমাদের ভয় দেখানো হয়েছে। এখন আমরা ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কিত।”

বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, “কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা আছে। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। কারা অভ্যন্তরে কারও মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুযোগ নেই। ওই কারারক্ষী সম্ভবত লুকিয়ে এমন কাজ করেছেন। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, “পুরো ঘটনাটি জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ঘটনায় জড়িত কারারক্ষীকে বরখাস্তের পাশাপাশি কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।”

আরো পড়ুন