‘বাবা তোমাকে রৌদে পুড়তে দেব না’ বলা ছেলেটা গুলিতে নিহত
‘মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত, বাবা, আর কটা দিন অপেক্ষা করো। তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না। কেউ কখনও এমন করে আর বলবে না। আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি মাঠে কাজ করে খাই। আমিও কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই।’
রোববার (২৮ জুলাই) সরেজমিন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে গিয়ে কাটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাগর আহমেদের (২১) বাবা তোফাজ্জল হোসেনকে এভাবে বিলাপ করতে দেখা যায়।
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দেব না। আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন, তাই করেছেন। কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ধৈর্য ধরার চেষ্টা করছি। আমার বুকের মানিক যেন পরপারে ভালো থাকে।’
তোফাজ্জল জানান, তার মেয়ে নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। বোনকে নিয়ে সাগরের অনেক স্বপ্ন ছিল। নুশমীকে ঢাকা নিয়ে কোচিং করাবে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে। দুই ভাইবোন এক জায়গায় থাকবে। লেখাপড়া শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে।
সাগরের মৃত্যুর আটদিন পরও বাড়িটিতে চলছে মাতম। একমাত্র ছেলে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা তোফাজ্জল হোসেন। বেশিরভাগ সময় নির্বাক থাকছেন। মা গোলাপী বেগমের অবস্থা আরও করুণ। ছেলের শোকে মুখে তুলছেন না খাবার, প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্না থামছে না একমাত্র কলেজপড়ুয়া বোন নুশমীর।
জানা গেছে, সাগর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাগর তোফাজ্জল হোসেনকে ফোন করে বিকাশে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। টাকা দেওয়ার পর পেয়েছেন কিনা নিশ্চিত হতে কল দেন তিনি; কিন্তু রিসিভ হয় না। দুপুর ১টার পর একটা কল দিতেই থাকেন তোফাজ্জল। মিনিট দশেক পর একবার রিসিভ হলে অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বলেন, সাগর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আরও কয়েকবার কল দেন, রিসিভ হয় না।
সাগরের চাচা মুনছুর আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতে সাগরকে তারা দাফন করেন। আটদিনেও ওর মা-বাবা এবং বোন স্বাভাবিক হতে পারেননি। এরই মধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে সাগরের বিষয়ে নানা তথ্য নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সাগর কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না।’