একুশে পদক পাচ্ছেন অভ্র’র মেহেদী হাসান খান
![](https://dailycomillanews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
বাংলা ভাষার ডিজিটাল বিপ্লবের এক যোদ্ধা মেহেদী হাসান খান। অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক এই প্রতিভাবান প্রোগ্রামার এবং চিকিৎসক এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক পাচ্ছেন। বাংলা ভাষায় লেখাকে সহজতর করার জন্য তার অবদান অবিস্মরণীয়।
এক প্রতিভাবান উদ্ভাবকের যাত্রা
মেহেদী হাসান খানের জন্ম ঢাকায়। তিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
তার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। ২০০৩ সালে তিনি ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেন।
অভ্র কিবোর্ডের সৃষ্টি ও সংগ্রাম
২০০৩ সালের বইমেলায় বায়োস নামক একটি সংগঠনের প্রদর্শনী দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মেহেদী হাসান। তখনই তার মনে উদ্ভব হয় একটি সহজতর বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরির চিন্তা। সেই চিন্তাই পরবর্তীতে বাস্তবে রূপ নেয় অভ্র কিবোর্ডের মাধ্যমে।
শুরুর দিকে, ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার না থাকায় তিনি নিজেই একটি সমাধান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে মাইক্রোসফট ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। কিন্তু সেটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। অবশেষে, ক্ল্যাসিক ভিজ্যুয়াল বেসিকের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি সংস্করণ তৈরি করেন, যা বাংলা লেখার জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।
২০০৩ সালের ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো অভ্র কী-বোর্ড উন্মুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওমিক্রনল্যাব থেকে এটি মুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজেও অভ্র ব্যবহার করেছে।
প্রভাব ও জনপ্রিয়তা
অভ্র সফটওয়্যারের কারণে কম্পিউটারে বাংলা লেখা সহজ হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবাই এটি ব্যবহার করতে শুরু করে। অভ্র’র অন্যতম জনপ্রিয়তা এর ওপেন সোর্স প্রকৃতি এবং কাস্টম লেআউট সুবিধার জন্য।
অভ্র টিমের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রিফাত উন নবী, সিয়াম রুপালী ফন্টের জনক সিয়াম, সারিম, ভারতের নিপন এবং মেহেদীর সহধর্মিণী সুমাইয়া নাজমুন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভ্র আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
অভ্র কী-বোর্ডের জন্য ২০১১ সালে মেহেদী হাসান খান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বেসিস পুরস্কার পান। ২০২৫ সালে একুশে পদকের স্বীকৃতি তার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল।
অভ্র বনাম বিজয়
অভ্র কিবোর্ড বিজয়ের তুলনায় অধিক ব্যবহারকারী-বান্ধব এবং ওপেন সোর্স হওয়ায় বেশি জনপ্রিয়তা পায়। এটি ফ্রি হওয়ায় ব্যবহারকারীরা সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। অপরদিকে বিজয় কিবোর্ড নির্দিষ্ট লাইসেন্সের আওতায় থাকে।