হাসিনা নন, দিশেহারা আ.লীগের দায়িত্ব নেবেন অন্য ‘পালাতক’ নেতা!

গর্ত থেকে গলা বের করছে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হওয়ার অপচেষ্টা করছে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে অরাজকতা তৈরি করতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নির্দেশনা। এসব অপকৌশল বাস্তবায়নে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নিজ কর্মী-সমর্থকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন-তার এমন একটি অডিও রেকর্ড সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে তার এমন রেকর্ড ভালোভাবে নিচ্ছেন না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা। তারা বলছেন, আত্মগোপনে থাকা পতিত ফ্যাসিস্টরা নতুন করে হুংকার দিচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের এসব অপকর্ম ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।
আত্মগোপনে থাকা জাহাঙ্গীর আলমকে ১১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের বাড়ির মধ্যে গুছিয়ে দিবে না। আমাদের নেতা (শেখ হাসিনা) তার কাজ তিনি করছেন। আমাদের যে কাজ, তা আমাদেরই করতে হবে। নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে হবে। আপনাদের কী করতে হবে, ২৪ ঘণ্টা আগেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে। যা বলা হবে-আপনরা নিজ নিজ জায়গা থেকে পালন করবেন। দ্রুতই আপনাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি বলেন, শকুনেরা দেশ দখল করছে। তাদের দখল থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের শৃঙ্খল থাকতে হবে। আমাদের দলের প্রধানকে কীভাবে দেশে আনা যায়, সেজন্য সবার মধ্যে ঐক্য, সততা ও সাহসের জায়গাটা থাকতে হবে। আমরা ১ লাখ মানুষ যদি এক সঙ্গে হই, কোনো শক্তিই আমাদের দমাতে পারবে না। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারলে সারা দেশে অবস্থান হয়ে যাবে।
জাহাঙ্গীর বলেন, শুধু ছাত্রলীগে ৩৬ লাখ নেতা থাকার কথা। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠন মিলে ১ কোটি ৭২ লাখ নেতা পদে থাকার কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে হয়নি আপনারা সবাই জানেন। আমাদের ভুলত্রুটি ছিল, তাও সবাই জানি। আমরা সবাই কেন্দ্রীয় ও আন্তর্জাতিক নেতা হয়েছি। কিন্তু নিজের ওয়ার্ডের খবর জানি না। নিজের ওয়ার্ডে অন্য কেউ অবস্থান করে দিবে না। নিজ নিজ ওয়ার্ডে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে হবে। তাহলে সারা দেশেই আমাদের অবস্থান হয়ে যাবে।
আত্মগোপনে থাকা পতিত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব নির্দেশনা ভালোভাবে নিচ্ছেন না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ ছাত্রনেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। বিদেশে থেকে তারা দেশকে সংকটের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। এজন্যই দেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে থাকা নেতাদের এসব নির্দেশনা দিচ্ছে। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের এসব অপকর্ম প্রতিহত করতে হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের এ চক্রান্ত মোকাবিলা করতে হবে। নইলে তারা আত্মগোপনে থেকে অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাবে এবং দেশে অরাজকতা তৈরি করবে।’
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দলের ফেসবুক পেজে নেতাকর্মীদের প্রতি বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গতকাল রবিবার প্রথমবার কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। রবিবার রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ সবাইকে সমবেত হওয়ার ডাক দেয় তারা। তবে সে কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগের। দুই এক স্থানে ঝটিকা মিছিল ছাড়া কোথাও নেতাকর্মীদের জমায়েত হতে দেখা যায়নি।
এর আগে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভূত হবে।’ তবে সেটি কীভাবে হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তিনি দেননি। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ দলের নেতারা এর মধ্যেই তৃণমূলের ইউনিট নেতাদের সাথে কথা বলতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, দেশের চল্লিশ ভাগ ভোটার আওয়ামী লীগের। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই আমরা ঘুরে দাঁড়াব। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে নির্বাচনেও যাব। এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আমরা দলকে সংগঠিত করার কার্যক্রম শুরু করেছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সে কারণে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করতেই পারেন।
তিনি বলেন, এমন বৈঠক হলে সেটি হয়তো হবে দলটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে একটি রাজনৈতিক কৌশল। তবে দেখার বিষয় হবে সে বৈঠকে শেখ হাসিনা কী বার্তা দেন।