বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব

বাংলাদেশের বর্তমান নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ প্রস্তাব করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এছাড়া চারটি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। সেগুলো হলো- আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহি, শরিয়াহ আইন এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে মতামত তুলে ধরেন দলটির নেতারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে দলটির মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৩০টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টিতে দ্বিমত এবং ১১টিতে আংশিক একমত। এছাড়া দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে।

চারটি মৌলিক প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি না থাকলে মানুষ সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক হতে পারে। এ জন্য সব পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি বা শুদ্ধাচারের কথা বলেছি।

চারটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে, বিবেকের কাছে, জনগণের কাছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে তা বন্ধে শরিয়াহ আইন করার দাবি জানান তিনি। আশরাফ আলী আকন বলেন, শরিয়াহ আইনে সর্বজনীন, সবধর্মের বিষয়ে বিধান আছে। যা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে অত্যন্ত কার্যকর। বিএনপিও শরিয়াহ আইনে একমত, তারা শরিয়াহ বিরোধী আইন করবে না বলে আমাদের জানিয়েছে।

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক হারে চাই। স্থায়ীভাবে স্বৈরাচার প্রতিরোধ করাই কার্যকর পদ্ধতি। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদেও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব ইসলামী আন্দোলন করেছে বলে জানিয়েছেন আশরাফ আলী আকন।

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের সুপারিশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে একটা জনকল্যাণ রাষ্ট্র। জনকল্যাণ নামটা দেখলে মানুষের মনে যাতে অকল্যাণ কোন চিন্তা না আসে, এ জন্য আমরা পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশের প্রস্তাব করেছি।

স্বাধীনতা পরে সবার অংশগ্রহণে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারবো। আমাদের সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে বলে আমরা মনে করি না। কমিশনের পক্ষ থেকে মতামতগুলো পর্যালোচনা করবো, কোথায় একমত নয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করবো। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করবো।

প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন