সৌদিতে গিয়ে ১৫ মাস অনাহারে থাকা দিনমজুর ছেলের মৃত্যু, দেশে ফিরছে না মরদেহ

গাইবান্ধার ছোট্ট গ্রাম রসুলপুর বালুপাড়ায় এখন শুধু নীরবতা আর কান্নার সুর। দিনমজুর বাবার স্নেহধন্য ছোট ছেলে সাফিউল ইসলাম স্বপ্ন দেখেছিল পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে, মায়ের হাতে প্রথমবারের মতো এক মুঠো সুখ তুলে দেবে। সেই স্বপ্নের ডানায় ভর করে পাড়ি জমিয়েছিল সৌদি আরবে। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় চাকরি জোটেনি, আর জীবন কেটেছে রাস্তায়, মসজিদে, ফ্লাইওভারের নিচে—ক্ষুধা আর অভাবের নির্দয় যন্ত্রণা সঙ্গী করে। দীর্ঘ ১৫ মাসের অনাহার-অর্ধাহারের লড়াই শেষে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে হলো এক হাসপাতালের গেটে। আজও মরদেহ ফেরেনি দেশে, ফিরেছে শুধু অশ্রুসিক্ত স্মৃতি আর ভাঙা স্বপ্ন।
গোবিন্দগঞ্জের কামারদহ ইউনিয়নের রসুলপুর বালুপাড়া গ্রামের দিনমজুর মো. জলিল শেখের তিন ছেলের মধ্যে সাফিউল ছিলেন সবার ছোট। গত বছরের মে মাসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ এবং স্থানীয়ভাবে আরও ১ লাখ টাকা ঋণ করে এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তিনি।
পরিবার সূত্র জানায়, সেখানে পৌঁছে কোনো চাকরি না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েন সাফিউল। অর্থের অভাবে তিনি মসজিদে খাবার চাইতেন, কখনো রাস্তায়, কখনো আবার ফ্লাইওভারের নিচে রাত কাটাতেন। দীর্ঘ কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি। গত ২৮ জুলাই সৌদি আরবের এক হাসপাতালের গেটে মৃত্যু হয় সাফিউলের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই গ্রামের প্রবাসফেরত মিস্টারের মাধ্যমে সাফিউল ও রনি নামে দুই যুবক সৌদি আরব যান। তবে সঠিক কাগজপত্র না থাকায় দু’জনই কাজ পাননি। সাফিউল মারা গেলেও রনি এখনো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ— ঘটনার পর থেকে দালাল মিস্টার গা ঢাকা দিয়েছেন এবং যোগাযোগ করলেও কোনো সহায়তা করছেন না। মৃত্যুর অর্ধমাস পেরিয়ে গেলেও আর্থিকসহ নানা সংকটে আজও মরদেহ দেশে আনতে পারেনি পরিবার। শোকে কাতর তারা।
গাইবান্ধা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নেশারুল হক বলেন, “পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে মরদেহ দেশে আনতে সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”