মামুনের খুলি ফ্রিজে, মাথায় লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’

স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মো. মামুন মিয়া। তার মাথায় অস্ত্রোপচারের পর খুলি খুলে রাখা হয়েছে ফ্রিজে। মাথার ব্যান্ডেজে লেখা— ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’। হাসপাতালে টানা চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মামুনকে নেওয়া হয় আইসিইউতে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এখন কেবিনে দেওয়া হয়েছে।

মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টম্বর) সকালে পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন বলেন, “মামুনের অবস্থা কিছুটা ভালো। তার জ্ঞান ফিরে আসছে। এখন কেবিনে তার চিকিৎসা চলছে। মাথার ব্রেনের অংশে অপারেশন করায় আপাতত খুলি খুলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার মাথায় হাড় নেই। এক-দুই মাস পর অথবা অবস্থা অনুযায়ী খুলি আবার লাগানো হবে।”

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চবির আরেক শিক্ষার্থী সায়েমের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “সায়েমের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনকই বলা যায়। তার জ্ঞানের লেভেল ৩ এ চলে গিয়েছিল। পরে ৩ থেকে ৫/৬, এরপর গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত ৮/৯ এ ছিল। এই লেভেল সাধারণত আমাদের ১৫ থাকে। গতকাল মেডিক্যাল বোর্ড বসেছিল। এখন আবার অপারেশন করতে হতে পারে।”

চিকিৎসকরা জানান, মামুনের মাথার পেছনে ব্রেইনের অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। অপারেশনে তার মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে। এছাড়া, তার নাকে ও মুখে আঘাত লাগে, ফেটে যায় কানের পর্দা।

মামুনের সহপাঠী রাসেল রানা বলেন, “গত ৩১ আগস্ট সংঘর্ষের সময় মামুনের মাথায় ধারালো রামদা, চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয়। মানুষ হয়ে একজন মানুষকে কীভাবে এমন করে মারতে পারে।”

চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “৩১ আগস্ট সেদিন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে মামুনের অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশনে মামুনের মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। সে সুস্থ হলে দুই মাস পর তার খুলি লাগাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন।”

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া চিকিৎসাধীন মামুনের ছবি শেয়ার করে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান লেখেন, “যে মস্তিষ্কে যে মগজে ছিলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হওয়ার বুনন, যে মস্তিস্কে সুশিক্ষা দেশ গড়ার শপথ আজ সে মস্তিষ্কের উপরে হাড় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় তার হাড়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে নাই, রাষ্ট্র তার নিরাপত্তার ভার নিতে পারে নাই। তাদের চরম ব্যর্থতায় আমার ভাইয়ের মস্তিষ্ক আজ হাড়শূণ্য…।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিয়ান খান রাকিব লেখেন, “হাড় নেই, চাপ দিবেন না- এই এলাকার মানুষগুলো কতটা বর্বর হলে, এইভাবে শিক্ষার্থীদের কুপিয়ে আহত করতে পারে। আমাদের একটাই দাবি এই বর্বরদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”

গত ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ভাড়া বাসার গেট খোলাকে কেন্দ্র করে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই রাতে শুরু হওয়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ পরদিন রবিবারও চলে দফায়-দফায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপ-উপাচার্য, শিক্ষার্থী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ আহত হন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

গুরুতর আহতদের মধ্যে মামুন ছাড়াও চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে গত চার দিন লাইফ সাপোর্টে থাকা ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের জন্য গতকাল (৩ সেপ্টেম্বর) মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরো পড়ুন