কুমিল্লার আসিফ আকবর সঙ্গীতাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র
ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দিনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। তাঁর পিতা মরহুম এডভোকেট আলী আকবর ও মাতা রোকেয়া আকবর। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ।
স্ত্রী মিতু আকবর। দুই ছেলে রণ ও রুদ্র। ৯২ সালে বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিলো উনিশ বছর তিন মাস,কাজী সাহেব দেখিয়েছিলেন ২৫ বছর। বড় তিন ভাইকে টপকে বিয়ে করে ফেলেছিলেন। পড়তেন অনার্স ফার্ষ্ট ইয়ার ভিক্টোরিয়া কলেজের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে। খুব একটা ইনকাম না থাকলেও বাবার হোটেলে খারাপ ছিলেন না। তাইরে নাইরে করতে করতে সময় পার হত, ৯৬ সালে রণ (তাঁর বড় ছেলে) এর জন্ম। তারপর একটু সিরিয়াস হলেন আয় রোজগারের ব্যাপারে। তাঁর স্ত্রী করতেন শিক্ষকতা । সেশন জটের খপ্পরে পড়ে ৯৭ সালে অনার্স ফাইনাল দিলেন। এর মধ্যে আবার ‘ফিকল বয়েজ’ নামে একটি ব্যান্ড করলেন। মোটামুটি প্রশংসা ছিলো
তাদের।
জনপ্রিয় এই শিল্পীর সাধনা শুরু হয়েছিল শ্রীমতি কল্যাণী সেন গুপ্তার হাতে। মূলত: শৈশবে এই শিক্ষিকাই আসিফ আকবরকে নানাভাবে শিল্পের প্রতি উজ্জীবিত করেছিল। ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের সাথে যুক্ত হন। সে সময়ে নবীণ এই শিল্পীর সাথে প্লেব্যাকে সহশিল্পী হিসেবে গান গেয়েছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। তাঁর গাওয়া প্রথম ছবির নাম ‘রাজা নাম্বার ওয়ান’। বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এ পর্যন্ত অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন তিনি। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার সামিয়া জামানের ‘রানী কুঠির বাকী ইতিহাস’ চলচ্চিত্রে গান গেয়ে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এটা আমাদের কুমিল্লাবাসীর জন্য গৌরবের ব্যাপার।
সংগীত জীবনে শিল্পী আসিফ আকবরের প্রথম অ্যালবাম ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ কপি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
আসিফ আকবরের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি গান হচ্ছেঃ বুকের জমানো ব্যথা-কান্নার লোনা জলে-ঢেউ ভাঙ্গে চোখের নদীতে-অন্যের হাত ধরে-চলে গেছো দূরে-পারিনা তোমায় ভুলে যেতে-ও প্রিয়া তুমি কোথায়, কখনও ভালোবাসনি-করেছো শুধু অভিনয়, এখনও মাঝে মাঝে-মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরে-শুনি তোমার পায়ের আওয়াজ, ক্ষমা করে দিও আমাকে-ভুলতে পারিনা তোমাকে-চলে গেছো অনেক দূরে-আসবে না জানি ফিরে, নিষ্ঠুর তুমি-বড়ই নিষ্ঠুর তুমি-এ হৃদয় করেছো মরুভূমি, যারে ভালোবাসি আমি সেই কাছে নাই, আমার দু:খ সারি সারি-তোমার অবিশ্বাসী মন, জ্বালা জ্বালা অন্তরে-জ্বালা জ্বালা বুকের ভেতরে, জানি ভালোবাসো না আজ তুমি আমাকে-তবুও বারে বারে এই মনে ফিরে পেতে চায় তোমাকে-সঞ্চিতা ফিরে এসো-এই হৃদয়ে, তুমি বলো আলো-আমি বলি আঁধার-তোমার আমার এই তো শুধু ব্যবধান, আমার মাঝে নেই এখন আমি-স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে যেন স্বর্গে নামি-যেন অন্যতম এক ভালোবাসাতে, স্বপ্ন তুমি-কবিতা তুমি, বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় তোমার কথা ভাবছি, একলা ঘরে পড়ে আছি কেউ দেখেনা, থাকবো না মরে যাবো-ওপারে চলে যাবো, এই এমন সম্পর্ক-চার দেয়ালে থাকে বন্দী, যেতে চাইলে কাউকে ধরে রাখা যায় না, তুই যদি চন্দ্র হতি বাঁশ বাগানের মাথায়, দু:খ দিতে সবাই জানে-সইতে পারে ক’জন-আমি এক দু:খওয়ালা, কিছু ভুল-কিছু স্মৃতি-করে দিলো এলোমেলো-এই জীবন-কিছু গান-কিছু ব্যথা-করে দিলো বিষাদ কালো-এই জীবন-কিছু গান-কিছু ব্যথা-করে দিলো বিষাদ কালো-এই জীবন, বন্ধু তোর খবর কী রে?-এখনও কি খুঁজিস তুই-বুড়িগঙ্গার বুকের ভেতর, বুক ভরা যন্ত্রণা আর বেদনা-এত বেশি কেন দিলে বলে গেলে না, ঘুমিয়ে গেছে শহর হয়তো ঘুমিয়ে গেছো তুমি-জেগে আছে চাঁদ রজনী-আর জেগে আছি আমি চাঁদের আলোয়-যায় না মুছা ঐ চোখের পানি, ভালোবাসার মূল্য কত বলোনা তুমি সজনী, তুমি ভুলের প্রাসাদ গড়ে-চলে গেছো অনেক দূরে, কেমন আছো তুমি-সুখি হতো পেরেছো কিনা-জানতে বড় সাধ হয়-আমাকে ভুলেছো কিনা?, ভালোবাসি আমি তোমাকে-তুমি বুঝলে না-হৃদয়ের কথা কখনও তুমি জানলে নাসহ আরও অসংখ্য গান।
গান গাওয়ার সুবাধে কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর এ পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালী, কানাডা, জাপান, কোরিয়া, হংকং, মালয়েশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, আবুধাবী, দুবাই, শারজা, কাতার ও বাহরাইনসহ অনেক দেশে। কুমিল্লার কৃতি সন্তান, যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি সেই আসিফ আকবর এখন সবুজ শ্যামলের দেশ পেরিয়ে দেশের বাইরেও একজন প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী। বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনে আসিফ এক অনন্য নাম। তিনি ধীরে ধীরে আরো সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবেন বলে আমরা মনে করি।
তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট