কুমিল্লায় ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্চিত
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমির হোসেন’কে গতকাল সোমবার স্কুল চলাকালীন সময় পিটিয়ে আহত করেছে ওই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ৫ ছাত্র। দশম শ্রেণীর অনিয়মিত ছাত্ররা নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের উত্ত্যাক্ত করতো বলে মেয়েদের শ্রেণি কক্ষ পরিবর্তন করায় শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছে বখাটে ছাত্ররা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এস.এস.সি পরীক্ষার পূর্বে বিদ্যালয়ের মডেল ট্রেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের ২য় তলায় ক্লাস নেয়া হতো। তাঁদের ক্লাসের পাশেই ছিল নবম শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রীদের শ্রেণি কক্ষ। নবম শ্রেণীর ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেন মডেল ট্রেস্টে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক জন ছেলে তাঁদের উত্ত্যাক্ত করে আসছে। মেয়েদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ছেলেদের সতর্ক করে দেন শিক্ষকরা। কিন্তু এতেও কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার সকাল ১০ টায় বিদ্যালয়ের স্থায়ী/অস্থায়ী মোট ২৮জন শিক্ষক একটি জরুরী সভা করেন। সভায় সকল শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে নবম শ্রেণির মেয়েদের শ্রেণি কক্ষ পরিবর্তন করে নিচ তলায় আনার সিদ্ধান্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মডেল ট্রেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য কয়েকজন ছেলে। সভা শেষে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমির হোসেন শিক্ষদের অফিস রুমে বসা ছিল। এসময় মডেল ট্রেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোঃ হালিম, মোঃ শাহীন, মোঃ যোবায়ের, মোঃ জিহাদসহ ৫ ছাত্র অফিস রুমে এসে আমির হোসেনের কাছে নবম শ্রেণির মেয়েদের শ্রেণি কক্ষ পরিবর্তনের বিষয়টি জানতে চায়। এসময় শিক্ষক আমির হোসেন জানান, সকল শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়ছে। এতে ওই ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে আমির হোসেনে উপর হামলা চালায়। ছাত্ররা আমির হোসকে এলোপাথারি কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমির হোসেন মাটিতে পরে গেলে তাঁকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্ররা। আমির হোসেনের চিৎকারে অন্য শিক্ষক ও বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে। এসময় আমির হোসেন প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শিক্ষক’কে পিটিয়ে আহত করায় বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষেপে গিয়ে ওই ৫ ছাত্রকে ধাওয়া দেয়। কিছুক্ষন পর ওই ৫ ছাত্র বহিরাগত কিছু লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে অন্য শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এসময় বিদ্যালয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে শিক্ষকের উপর হামলাকারী ছাত্রদের মধ্যে মধ্যে মোঃ হালিমের মাথা ফেটে যায়। খবর পেয়ে বুড়িচং থানার ওসি (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্সসহ স্কুলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ শিক্ষকের উপর হামলাকারী ছাত্রদের মধ্যে তিন ছাত্রকে আটক করে। খবর পেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামসুল হক মুন্সি, মোকাম ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্সি, হাজী হুমায়ূন কবির মেম্বার, আরুন কুমার পালসহ গন্যমান্য ব্যাক্তি বর্গ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জরুরী সভায় বসেন। সভায় আহত শিক্ষক আমির হোসেনসহ অটককৃত তিন ছাত্র ও তাদের অভিভাকরা উপস্থিত হয়। সভায় ঘটনাটি সমাধান না করতে পারায় আগামী শনিবার সকাল ১০ টায় পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আহত শিক্ষক আমির হোসেন পুলিশের কাছে লিখিত কোন অভিযোগ না করায় আটককৃত ছাত্রদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকে মারধর করার বিষয়টি অত্যান্ত লজ্জাজনক, সংঘর্ষে বাঁধা দেওয়ার সময় ছাত্ররা আমার উপরও চড়াও হয়ে উঠে। তাঁদের সঠিক বিচার করা দরকার। আগামী শনিবার বিদ্যালয়ে পুনরায় সভার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আহত শিক্ষক আমির হোসেন জানান, আমি এই বিদ্যালয় থেকেই পড়ালেখা করেছি। দীর্ঘ ২৭ বছর যাবত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করে আসছি। মেয়েদের অভিযোগের ভিত্তিতে সকল শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে শ্রেণি কক্ষ পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা আমার একা কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। আমার কোন ক্লাশ না থাকায় আমি অফিস রুমে বসা ছিলাম, মডেল ট্রেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ জন ছাত্র হঠাৎ আমার উপর অতর্কিত হামলা চলায়। হামলায় আমি বুকে ও মুখমন্ডলে আঘাত পেয়েছি, প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমি বাড়ীতে চলে এসেছি।