‘আমি হামিদ কত খারাপ টের পাইবা’: আ.লীগের প্রার্থীর বাবার হুমকি

কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে।

আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসান শাহীনের বাবা এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বড় ভাই। মুস্তফা কামাল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন; তাদের মধ্যে শাহীন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। বাকি দুই প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার ও হারুন অর রশিদ মজুমদার লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

আগামী ১৬ মার্চ লালমাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে; ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

এ নির্বাচন সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার রাতে লালমাই উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন আবদুল হামিদ। সেখানে তার দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এক মিনিটের ওই ভিডিওতে আবদুল হামিদকে বলতে শোনা যায়, “আমি হামিদ কত খারাপ, এটা টের পাইবা। আমি ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিছি দুইজনকে, যে আমার ছেলের সাথে নির্বাচন করবা না। হয় বন্ধ করো, আর না হয় ২৮ তারিখ দেখা হবে রাস্তায়। তখন বুঝবা আমি কত খারাপ। আমার বয়স ৮০ বছর। আর কয় বছর বাঁইছছাম, আমার বাঁচার আর সাধ নাই।”

ওই সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের মধ্যে একাধিক নেতা বলেছেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরাতে আওয়ামী লীগ সভাপতির পরিবার নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। এ কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী মমিন মজুমদার ও হারুন অর রশিদ মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন।

ওই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবদুল হামিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

তার ছেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসান শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সাংগঠনিক বিষয়ে কথা বলতেই পারেন। আমাদের দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন। তাদেরকে নির্বাচনী মাঠে না দেখে আব্বা দলীয় নেতা হিসেবে হয়ত ওই বক্তব্য দিয়েছেন। বাবা এরই মধ্যে আমার জন্য মাঠে নেমেছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে প্রচারে থাকবেন।”

কাউকে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন কিনা এ প্রশ্নে শাহীন বলেন, “আমি বা আমার পরিবারের কেউ, কাউকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেই নাই।”

এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলমের ভাষ্য, আবদুল হামিদের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমার নজরে আসেনি; কেউ অভিযোগও করেনি। তবে যতটুকু আপনার কাছ থেকে জেনেছি, এই ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এ ধরনের বক্তব্য তিনি দিতে পারেন না। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

আরো পড়ুন